কলকাতা: ভারতীয় পুরাণে ‘অর্ধনারীশ্বর’ শব্দটি অনেকেই হয়তো শুনেছেন। এ যেন অনেকটা তেমনই। বীরভুম জেলার ৩০ বছর বয়সি এক মহিলা তলপেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, ওই মহিলা আদতে পুরুষ। তিনি শুক্রাশয়ের ক্যানসারে ভুগছেন। অথচ বাইরে থেকে তিনি সম্পূর্ণ নারীই। গলার আওয়াজ, বর্ধিত স্তন, যোনি, সবকিছুই আদ্যপান্ত নারীদের মতোই। কিন্তু ভেতর থেকে তিনি পুরুষ। জন্ম থেকেই তাঁর ডিম্বাশয় এবং জরায়ু নেই। এবং মাসিকও হয় না।
গত তিন বছর ধরে বিবাহিত জীবনযাপন করছেন ওই মহিলা। তলপেটে ব্যথা হওয়ায় কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি হন। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অনুপম দত্ত এবং সৌমেন দাস চিকিৎসা করে বুঝতে পারেন এই বিরল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন ওই মহিলা। আরও আশ্চর্যের বিষয়, ওই মহিলার ২৮ বছর বয়সি বোনেরও একই সমস্যা। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জিনগত ভাবে দু’জনেই পুরুষ। নারী শরীরে থাকে এক্সএক্স ক্রোমোজোম এবং পুরুষের শরীরে এক্সওয়াই, এই দুই মহিলার শরীরে রয়েছে সেই এক্সওয়াই।
চিকিৎসক অনুপম দত্ত জানিয়েছেন, সব কিছু পরীক্ষা করার পর বোঝা গেছে ওই মহিলা শুক্রাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছেন। তাঁর কেমোথেরাপি চলছে এবং আপাতত স্থিতিশীল অবস্থা। তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই মহিলার শরীরের ভেতরে শুক্রাশয় বাড়তে পারেনি ফলে টোস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদের শরীরে ক্ষরিত হয় তার ক্ষরণ হয়নি। এদিকে নারী হরমোন সক্রিয় থাকার ফলে বহিরঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ নারী।
এতদিন পর এমন অত্যাশ্চর্য বিষয় জানতে পেরে অবশ্যই মানসিক ধাক্কা লেগেছে ওই মহিলার। ইতিমধ্যেই তিনি ন’ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন। স্বভাবতই তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি। ওই দম্পতিকে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। বিবাহিত জীবন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি জিনগত সমস্যা কারণ ওই মহিলার দুই মাসিরও একই ‘রোগ’ রয়েছে।