খড়্গপুর: লকডাউন আবহে চমর হেনস্তার শিকার খড়্গপুর মহাকুমার কয়েক হাজার শিক্ষক৷ অভিযোগ, একমাসে দু’বার বেতন হওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে শিক্ষকদের দিতে হচ্ছে ১৩ মাস বেতনের আয়কর৷ করোনা মহামারীর আবহে অতিরিক্ত কর দেওয়ার বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন শিক্ষকদের একাংশ৷ যদিও, দীর্ঘ চিঠি-চাপাটির পর শিক্ষক সংগঠনের চাপে ১৩ মাসের আয়কর দাখিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন৷
শিক্ষক সংগঠন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির অভিযোগ, মোট আয়কর যোগ্য উপার্জন ৫ লক্ষ টাকা হলে আয়কর দিতে হয় না৷ কিন্তু ১৩ মাসের বেতন ধরে তাঁদের অতিরিক্ত প্রায় ২২ থেকে হাজার টাকা আয়কর দিতে হচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই যাঁদের এর থেকেও বেশি উপার্জন, তাঁদেরও অনেক বেশি মাত্রায় আয়কর দিতে হচ্ছে৷ অভিযোগ, খড়গপুর এডিআইয়ের তরফে ট্যাক্স কনসালটেন্ট ১৩ মাসের হিসেব করতে হবে বলে গত ১৫ জুন সমস্ত স্কুলে ইমেল বার্তা পাঠানো হয়৷ বাড়তি কর দেওয়ার বিধি কার্যকর হতে দেখে মাথায় আকাশ ভেঙে শিক্ষক মহলের একাংশ৷ করোনার মহামারীর মধ্যে বাড়তি কর নিয়ে চিন্তা বাড়তে থাকতে শিক্ষক মহলে৷
শিক্ষক সংগঠন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির খড়্গপুর মহকুমা কমিটির সম্পাদক শিশির মান্না, অলক শাসমল বিষয়টি নিয়ে ডিআই ও এডিআইয়ের কাছে সমাধানের জন্য দাবি জানান৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ডিআই চাপেশ্বর সর্দার সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করবেন বলেও আশ্বাস দেন৷ খড়্গপুর মহকুমা এডিআই তিমির বরন জানা শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, কেন ট্রেজারি মার্চ মাসে দু’বার বেতন দিয়েছে, তা তার জানা নেই৷ মার্চের পর বেতন হলে সমস্যা হত না৷
শিক্ষকদের এই সমস্যা সমাধানে শিক্ষক সংগঠনের তরফে আয়কর বিভাগকে চিঠি দিয়ে আবেদন করবেন করা হয়েছে, যাতে মার্চ মাসের বেতন পরের অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২০-২০২১ অর্থবর্ষে হিসাবে দেখানো হয়৷ অভিযোগ, এহেন পরিস্থিতি তৈরি হতেই ট্যাক্স কনসালটেন্ট বিভিন্ন স্কুলে ফোন করে চাপ দিচ্ছেন৷পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান চেয়ে শিক্ষক সংগঠনের তরফে উত্তম প্রধান, তপন দাস, অক্ষয় খান ও খড়গপুর মহকুমার শিক্ষক সংগঠনের সহ সম্পাদক অলক শাসমলের নেতৃত্বে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিআইকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়৷ শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের ডিআই জানান, তিনি প্রতিটি স্কুলের ইমেল করে জানিয়ে দেবেন, ১২ মাসের বেতনের হিসেবে আয়কর দিতে হবে৷ এই বিষয়ে ট্যাক্স কনসালটেন্ট স্বরূপ দত্তকে যেন সতর্ক করেন বলেও শিক্ষক সংগঠনকে জানানো হয়৷ খড়গপুর মহকুমার সম্পাদক শিশির মান্না এডিআইকে সমস্যা সমাধানের জন্য ডেপুটেশন দেন৷ কিন্তু গত ৬ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিআই প্রতিটি স্কুলে ইমেল করে জানান, ১৫ জুনের মধ্যে ১৩ মাসের বেতনের আয়কর হিসেব হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে৷
আচমকা প্রশাসনিক অবস্থান বদল ঘিরে শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব গৌতম মান্না, তপন দাস, অক্ষয় খাঁন ও উত্তম প্রধানের নেতৃত্বে ডিআইকে সমস্যার কথা বলেন৷ বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ৷ এরপর শিক্ষক সংগঠনের তরফে রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র গত ১৫ জুন ডিপুটি ডিরেক্টর অফ গ্র্যান্ড ইন এড অলক সরকারের সঙ্গে ফোনে সমস্যা সমাধানে বিষয়ে কথা বলেন৷ অলক সরকারের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিআইয়ের কথা বলে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন৷
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ অন্য জেলার ডিআইরা ১২ মাসের হিসেব হবে বলে সার্কুলার জারি হলেও পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে কেন ১৩ মাসের হিসেবে আয়কর দিতে বলা হচ্ছে? প্রশ্ন শিক্ষকদের৷ গত ২২ জুন শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পদক বিশ্বজিৎ মিত্রের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল বিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রীর সচিবালয়ে, কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনের দফতরে ও ডেপুটি ডিরেক্টর অফ গ্র্যান্ড ইন এডে সমস্যা সমাধানের জন্য ডেপুটেশন দেন৷ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস মেলে৷ গত ২৪ জুন খড়গপুর এডিআই ১২ মাসের হিসেব আয়কর দিতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেন৷ ফলে, এক নির্দেশে মেটে সমস্যা৷
এপ্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নেতৃবৃন্দকে আমি ধন্যবাদ জানাই৷ এই ধরনের একটি সফল আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য৷ এই আন্দোলনের ফলে উপকৃত হবেন পশ্চিম মেদিনীপুর সহ নানান জেলার হাজার হাজার শিক্ষক শিক্ষা কর্মী৷’’