মেদিনীপুর: ডাইনি সন্দেহে ছয় মহিলার ওপর চলল বেধড়ক মারধর। অকথ্য অত্যাচারে মৃত্যু হল এক মহিলার। গ্রামে কিছু হাঁস মুরগি মারা যাওয়ার পর ৩ দিন ধরে পুজোপাঠ চলে ঘাটালের ঈশ্বরপুর গ্রামে। এরপর ডাইনি সন্দেহ করে ধরা হয় ৫ জনকে। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে টাকাও চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। টাকা দিতে না পারায় এরপর ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে পিটিয়ে মারা হয় মহিলাকে। ৩ দিন ধরে এই পুজোপাঠ চলার কথা জেনেও পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ নীরব ছিল বলে অভিযোগ। মৃত্যুর খবর পেয়ে অনেক পরে রবিবার দুপুরে পুলিশ দেহ উদ্ধারের জন্য গেলে সেখানে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধও বাঁধে। গুজবের এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ঘরছাড়াও হতে হয়েছে আশেপাশের গ্রামের মানুষকে।
ঘটনাস্থল ঘাটাল ব্লকের মোহনপুর অঞ্চলের ঈশ্বরপুর গ্রাম। এই গ্রামেই সম্প্রতি কিছু হাঁস মুরগি, ছাগলকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, আদিবাসী প্রধান এই গ্রামে লোকমুখে কয়েকটি শিশু মৃত্যুর খবরও ঘুরতে থাকে। গত ৩ দিন ধরে তার জন্যই শুরু হয় পুজো পাঠ। এরপর রটিয়ে দেওয়া হয় গ্রামে ডাইনি আছে। শ্যামলী মান্ডি নামে এক গুণিনকে নিয়ে আসা হলে সে বলে সেখানে ৬ জন ডাইনি আছে। জানা গিয়েছে, শ্যামলী মান্ডি ঘাটাল বসন্তকুমারী উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। এরপর ওই গ্রামের বাসিন্দা আদরমণি হাঁসদা (৫০)’কে শনিবার মাঝরাতের পর তাঁর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়। তার সঙ্গেই সেই বাড়ি থেকেই আরও ৫ গৃহবধূকে গ্রামের পাশে পুকুরের ধারে যেখানে পুজো হচ্ছিল সেখানে আনা হয়। জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য রীনা দলুই ঘটনার কথা জানতেন। এরপর গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে টাকা দাবি করা হয় আদরমণি হাঁসদা ও বাকিদের কাছ থেকে। এই গরিব পরিবার টাকা দিতে না পারায় চলে নির্যাতন। ব্যাপক মারধরে রবিবার আদরমণি হাঁসদার মৃত্যু হয়। বাকি মহিলাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আশঙ্কাজনক অবস্থায়।
ঘটনার পর সব জানাজানি হওয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। তারা অনেক পরে গ্রামে ঢুকে মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু গ্রামবাসীরা বাধা দেওয়ায় পুলিশ ফিরে যায়। দুপুরের পর ফের এসডিপিও’র অধীনে পুলিশ সেখানে যায়। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। রবিবার গোটা দিন ও সন্ধ্যার পরেও এলাকা থমথমে দেখা যায়। অনেকের প্রশ্ন, প্রশাসন সব জেনেও নীরব ছিল কেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় আশেপাশের গ্রামের দুই একজনকে ঘরছাড়াও হতে হয় বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এই ঘাটাল ব্লকেই দাসপুর থানা এলাকার দুবারাজপুর গ্রামে বছর পাঁচেক আগে ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে চার মহিলাকে নদীর চরে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। ময়নাতদন্তের পর জানা যায় জীবিত অবস্থায় পুঁতে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। সেবারও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মানুষ। এদিনের এই ঘটনাতেও স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন আশেপাশের এলাকার বহু বাসিন্দা।