কলকাতা: কয়েক বছর আগে তৃণমূল বিরোধিতাকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন রাহুল গান্ধী। যে বিষয়টি নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলেই জানেন বাংলায় যে সমস্ত কংগ্রেস নেতা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অধীর মমতার সবচেয়ে বেশি কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের যে ‘ইন্ডিয়া’ জোট হয়েছে তা ধরে রাখতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ বার্তা দিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অধীর চৌধুরীকে সরানো হতে পারে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ তৃণমূলকে এভাবেই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় বা রাজ্য স্তরে মমতাকে সেভাবে কংগ্রেসের বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে না। আর এটা যদি বাস্তবে ঘটে তাহলে সেটা যে অধীরের পাশাপাশি বঙ্গ কংগ্রেস নেতাকর্মীদের কাছে কত বড় ধাক্কা হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমনিতেই রাজ্য কংগ্রেস অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও শহরে বা গ্রামবাংলায় কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে লড়াই করে দলীয় পতাকাটা ধরে রেখেছেন নিজেদের মতো করে। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে তাঁরা লড়াই চালাচ্ছেন তৃণমূলের সঙ্গে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসায় বেশ কয়েকজন কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। এমনকী জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনের ক্ষেত্রে সিপিএমকে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে কংগ্রেস। আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই সরব হচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
বিভিন্ন ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়মিত নিশানা করে চলেছেন তিনি। তবে এবার প্রেক্ষাপটটা বদলে যেতে শুরু করেছে। অধীরের এই তীব্র তৃণমূল বিরোধিতা কংগ্রেস হাইকমান্ড কতটা মেনে নেবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পর থেকেই। সেই বৈঠকে পাশাপাশি ছিলেন মমতা এবং রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধীকে আমাদের ‘প্রিয় নেতা’ বলে বর্ণনা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এতদিন ধরে রাহুলকে নিয়ে মমতা তথা তৃণমূলের যে অ্যালার্জি ছিল সেটা হঠাৎই উধাও হয়েছে।
এরপর থেকেই অস্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে অধীরের। তাই সূত্রের খবর, মমতাকে বিশেষ বার্তা দিতে অধীরকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সেই পদে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আনা হতে পারে। কারণ প্রদীপ কোনও দিনই মমতার কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নন। সবচেয়ে বড় কথা কংগ্রেস একার শক্তিতে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে রাজ্যসভার সাংসদ করতে পারত না যদি না তৃণমূল বিধায়কদের সমর্থন প্রদীপের পক্ষে থাকত। সেই জায়গা থেকে প্রদীপ কোনও দিনই মমতার সেভাবে বিরোধিতা করতে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।
অর্থাৎ দিল্লির সিংহাসনের দিকে নজরে রেখে তৃণমূলকে খুশি করতেই অধীরকে হাইকমান্ড সরিয়ে দিতে চাইছে বলেই জানা যাচ্ছে। তাতে যে রাজ্যে কংগ্রেস যে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। যদিও এ বিষয়ে রাজ্য কংগ্রেস বা হাইকমান্ডের তরফ থেকে কিছুই বলা হয়নি। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এটা যে হতে পারে সেই সম্ভাবনা ষোল আনা রয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। তাই আগামী দিনে বিষয়টি কোন দিকে যায় এখন সেটাই দেখার।