নিজস্ব প্রতিবেদন: অনেক সময় পর আবার রাজ্য-রাজনীতির বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে নন্দীগ্রাম। মূলত তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান দেওয়ার পরেই নন্দীগ্রাম নিয়ে ফের একবার আলোচনা এবং দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলায়। নতুন বছরের শুরুতেই নন্দীগ্রামে সভা করার কথা ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদিও সুনির্দিষ্ট কারণবশত সেই সভা করেননি তিনি। এদিকে মমতার সভার পাল্টা সভা করার কথা বলে নির্দিষ্ট দিনে সভা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেদিন তিনি ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকেন মমতা এবং তৃণমূলকে। তবে শুধু সেদিন নয়, বছরের শুরুর দিনেও নন্দীগ্রামের সভা করে তৃণমূল কংগ্রেসকে একহাত নেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর সেই ‘বড় বড় কথার’ এদিন হয়তো পাল্টা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বড় ঘোষণা’ করে রাজনৈতিক মহলের উত্তাপ বাড়িয়ে দিলেন।
নন্দীগ্রামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি নেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার বলেছেন, তিনি নন্দীগ্রামের আপনজন। প্রতিবছর সেখানে আসেন, মানুষের পাশে সর্বদা থাকার চেষ্টা করেন। মূলত নন্দীগ্রাম শহীদ দিবস উপলক্ষে ভাষণ দিয়ে তিনি বলেছিলেন এ কথা। অন্যদিকে, এর আগে নন্দীগ্রামের সভায় শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, সোনার বাংলা গড়তে বিজেপিকে আনতে হবে বাংলায়। তৃণমূল কংগ্রেস ধীরে ধীরে ভাঙবে। কার্যত নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা অস্বীকার করে গিয়েছেন তিনি। তবে শুধু নন্দীগ্রাম থেকে ভাষণ দিয়ে নয়, নিজের যে কোন ভাষা নেই নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর ইস্যুতে রাজ্যের শাসক দলকে রীতিমতো অবহেলা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এতদিন হয়তো সেই সমস্ত কথা হজম করছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রথমবার নন্দীগ্রামের সভা করেই বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করলেন তিনি। ঘোষণা করে দিলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের নন্দীগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন মমতা। তাহলে কি সেই ‘বড় বড় কথা’র জবাব দিতেই ‘বড় ঘোষণা’ করতে হল তাঁকে?
তাহলে এখন কে বড়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাকি শুভেন্দু অধিকারী। আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। হয়তো এখন এই বিষয়ে তর্ক করার সময় আসেনি। তবে বিজেপিতে যোগদান দেওয়ার আগে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন, তার থেকে বোঝা যায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মমতা বিরোধী মুখ হয়তো হয়ে উঠতে পারেন শুভেন্দু। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপির তরফ এখনো কোনো নেতার নাম ঘোষণা করা হয়নি। জল্পনা চলছে, হয়তো দিলীপ ঘোষ হতে পারেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। যদিও দিল্লি অভি বহৎ দূর হ্যায়। এই পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রাম ইস্যুসহ একাধিক ইস্যুর উপর ভিত্তি করে আন্দাজ করা যাচ্ছিল যে বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি লড়াইয়ে কার্যত সম্মুখ সমরে আসতে পারেন শুভেন্দু-মমতা। আর সেই যুদ্ধের পটভূমি যে নন্দীগ্রাম হবে তা অজানা নয়। এবার কার্যত ফ্রন্ট ফুটে এসে ছক্কা হাঁকানোর মত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিলেন তিনি হতে চলেছেন নন্দীগ্রামের বিধানসভা নির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। এবার তাহলে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে নিজেকেও কি নন্দীগ্রামের বিজেপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী, এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই সবার মনে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। তবে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন বিজেপি নেতা? নাকি পাল্টা জবাব দেওয়ার নামে আবারো ‘বড় বড় কথা’র আক্রমণকে বেছে নেবেন, আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে অল্প কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।