trinamool
নিজস্ব প্রতিনিধি: জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে সিপিএম নেতাদের ঢুকতে বাধা দিল পুলিশ। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সেখানে ঢুকতে পারলেন না রাজ্য সিপিএমের একাধিক নেতা। গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম তথা বামেরা শূন্য হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে সিপিএমের অস্তিত্ব নেই, এই কটাক্ষ বারবার করতে থাকেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিপিএমের বহু কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য প্রশাসনের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উল্লেখ্য জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে খুনের পরই দলুয়াখাকি গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগের আঙুল রয়েছে তৃণমূলের দিকে।
আর মঙ্গলবার সেই গ্রামে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেলেন সিপিএম নেতারা। এদিন সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়দের নেতৃত্বে সিপিএমের প্রতিনিধি দলকে দলুয়াখাঁটি গ্রামে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বচসা, এমনকী ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়েন সুজন চক্রবর্তীরা। এরপর বাম প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পৌঁছে যান জয়নগর থানায়। থানার সামনেও পুলিশের সঙ্গে বসসায় জড়িয়ে পড়েন সুজন, কান্তিরা। অভিযোগ বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। এরপর তাঁরা ত্রাণ সামগ্রী থানা চত্বরেই রেখে দেন। সেই সঙ্গে তাঁরা পুলিশের উদ্দেশে বলেন,”ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আমাদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই পুলিশকেই এই সমস্ত জিনিসপত্র গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে।” সিপিএম নেতাদের অভিযোগ বেছে বেছে তাঁদের দলের কর্মীদেরই টার্গেট করা হয়েছে। অন্ততপক্ষে পঁচিশটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে চলেছে লুটপাট। এরপর গ্রামের সমস্ত পুরুষ এলাকা ছেড়ে চলে যান। তাঁরা বাড়িতে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন বলে সিপিএম নেতাদের দাবি। সিপিএম নেতাদের উপস্থিতিতে গ্রামের মহিলারা লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে থানা চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে একটা সময় দলুয়াখাঁটি গ্রামে সিপিএমের ভাল প্রভাব ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরেও ওই গ্রামের বড় অংশ সিপিএমকে সমর্থন করে গিয়েছেন। তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএম সেখানে ক্রমশ জমি হারাতে শুরু করে। তবে কী হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতেই খুনের ঘটনার পর আক্রান্ত দলীয় সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন সিপিএম নেতৃত্ব? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে। কিন্তু সিপিএমের যে উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, সিপিএম নেতাদের ওই গ্রামে কেন ঢুকতে দেওয়া হল না? বামেদের নিয়ে এখনও কেন এত ভয় তৃণমূলের? ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাঁদের এখনও যেভাবে সিপিএমের প্রতি সমর্থন রয়েছে তা শাসক দল ভাল চোখে দেখছে না বলেই রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গিয়েছে গ্রামবাংলায় আগের চেয়ে কিছুটা হলেও জমি পুনরুদ্ধার করেছে বামেরা। তাই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা তৃণমূলের ঘাঁটি হলেও দলুয়াখাকি গ্রামে যেভাবে সিপিএমের প্রতি সমর্থন রয়েছে, তা তৃণমূলকে কিছুটা হলেও ভাবাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। সেই কারণেই কী সুজন চক্রবর্তীদের বাধা দেওয়া হয়েছে? এই প্রশ্ন তো উঠবেই।