হাওড়া: অবশেষে প্রকাশ্যে এল নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়ের নিখোঁজ রহস্য৷ আজ সকালে হাওড়া স্টেশন থেকে অর্ণবকে উদ্ধারের পর ম্যারাথন জেরায় সাত দিনের নিখোঁজ থাকার ঘটনা কবুল রাজ্য সরকারি আধিকারিকের৷
সিআইডি সূত্রে খবর, কাজের চাপেই তিনি নিজে থেকেই গাঢাকা দেন৷ চেয়ে ছিলেন ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি পেতে৷ ছিলেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত৷ দফায় দফায় জেরার পর অর্ণববাবু নিজেই জানিয়েছেন, তিনি কাজের চাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে ফোন বন্ধ করে একান্তে কয়েকটা দিন কাটাতে চেয়েছিলেন৷ আজ, দুপুরে ভবানী ভবনে বসিয়ে অর্ণব ও তাঁর স্ত্রীকে প্রায় ঘণ্টাখানিক জেরা করা হয়৷ সেখানে অর্ণব রায় বলেন, ‘‘কাজের চাপে মানসিক অবসাদে ডুবে গিয়েছিলাম। ভোটের দায়িত্ব থেকে ছুটি চেয়েও পাইনি৷ তাই বাধ্য হয়েই গা ঢাকা দিয়েছিলাম৷ আজ ঠিক করেছিলাম বাড়ি ফিরব৷ স্ত্রীকেও এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি৷’’
অন্যদিকে, অর্ণব নিখোঁজ মামলায় পূর্ণঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ একই সঙ্গে অর্ণবের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর পরিবর্তে নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এই কাজ দেখভাল করবেন বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে৷
আজ বৃহস্পতিবার টানা এক সপ্তাহ পর অবশেষে উদ্ধার হয় নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়ের খোঁজ পায় সিআইডি৷ হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁকে৷ ঘণ্টা দুয়ের বিশ্রাম দেওয়ার পর তাঁকে জেরা শুরু করে সিআইডি৷
গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে নদীয়া জেলায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অর্ণব রায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। জেলার ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কর্মসূত্রে জেলার ১০০ দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার তিনি। নিখোঁজ অর্ণবের সন্ধানে তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশ৷ তদন্ত করে সিআইডিও৷ রাজীব কুমার নিজেই এই তদন্তপক্রিয়ায় হাত লাগান৷ তাঁর দু’টি মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকলেও পরে শেষ একবার খোলা হয় ফোন৷ সেখানে টাওয়ার লোকেশন অনুসরণ করে সিআইডি আজ তাঁকে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করে৷
সিআইডি সূত্রে খবর, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকেই তিনি হাওড়ার ছিলেন৷ শিবপুরের শ্বশুরবাড়িতেই তিনি ছিলেন বলেও জানা বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে৷ কিন্তু, নিজের বাড়িতে স্বামীকে রেখে হঠাৎ কী কারণে তিনি স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অনীশ যশ? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷ অর্ণবকে অপহরণ করা হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ গত সাতদিন তিনি কোথায়, কিভাবে কেন নিজেকে আত্মগোপন রেখেছিলেন, তাও জানান কাজ শুরু হয়েছে৷ অর্ণবের স্ত্রী ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জেরা করা হবে বলেও খবর৷
রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে WBCS অফিসার অনীশা যশ আগেই জানিয়েছিলেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত৷ এতদিন ধরে পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছি৷ অথচ, কেউ কিছুই বলতে পারছেন না৷ কোথায় গেলে, কীভাবে পাব আমার স্বামীর খোঁজ৷’’ এর আগে কমিশনের তরফে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখানো হলেও তাঁর সাফ জবাব দেন, ‘‘উনি আমার স্বামী৷ সেদিন ওর সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছিল৷ কিন্তু, হঠাৎ যে কী হল…৷’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, সবাই মিলে চেষ্টা করুন, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷ ওর বাবা-মায়ের এক ছেলে৷ ওঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ ওঁদের কাছে অর্ণবকে ফিরেয়ে দিন প্লিজ৷ কেউ আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷’’
কিন্তু অভিযোগ উঠছে, অর্ণববাবু যদি নিখোঁজ হওয়ার পর হাওড়ার শিবপুরে থেকে থাকেন, তাহলে কেন তদন্তের গতিপ্রকৃতি অন্যপথে চালানোর চেষ্টা করলেন WBCS অফিসার অনীশা যশ? ভোটের ডিউটি এড়ানোর জন্য এই পরিকল্পনা, নাকি এই ঘটনার পেছনে অন্যকোনও রহস্য? তা জানতে মাঠে নেমছে সিআইডি৷