অভিনন্দনের জন্য উদ্বেগে থাকা বাংলা এখনও কেন চুপ অর্ণব রায়ের অন্তর্ধান রহস্যে?

কৃষ্ণনগর: টানা সাতদিন অতিক্রান্ত৷ এখনও নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়৷ নিখোঁজ WBCS অফিসারের খোঁজে চলছে সিআইডি তদন্ত৷ গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিজে খতিয়ে দেখেন রাজীব কুমার৷ জেলা প্রশাসনের তরফে তৎপরতা শুরু হলেও রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের অন্তর্ধান রহস্য ঘিরে তৈরি হয়েছে নানান বির্তক৷ সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা৷ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে

অভিনন্দনের জন্য উদ্বেগে থাকা বাংলা এখনও কেন চুপ অর্ণব রায়ের অন্তর্ধান রহস্যে?

কৃষ্ণনগর: টানা সাতদিন অতিক্রান্ত৷ এখনও নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়৷ নিখোঁজ WBCS অফিসারের খোঁজে চলছে সিআইডি তদন্ত৷ গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিজে খতিয়ে দেখেন রাজীব কুমার৷ জেলা প্রশাসনের তরফে তৎপরতা শুরু হলেও রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের অন্তর্ধান রহস্য ঘিরে তৈরি হয়েছে নানান বির্তক৷ সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা৷

রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে শুরু করেছেন, ‘অদ্ভুত ব্যাপার! একজন জলজ্যান্ত মানুষ হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলেন৷ কারো কোনও হেলদোল নেই৷ সাড়াশব্দ নেই। নির্বাচন কমিশন চুপ৷ মন্ত্রীরাও চুপ৷ চুপ সংবাদমাধ্যম‌ও।
একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নদীয়ার নোডাল অফিসার হঠাৎ করে উধাও৷ তার কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। অশ্রুসজল নেত্রে, কম্পিত কন্ঠে অর্ণব রায়ের মা ও স্ত্রীর কাতর আকুতি দেখলাম সামাজিক গণমাধ্যমে৷ কিন্তু না, তাঁদের কাতর আকুতি স্পর্শ করেনি, কমিশন বা মন্ত্রী বা মিডিয়া কারও হৃদয়। সবাই নাকি ব‍্যস্ত নির্বাচনী তামাশায়৷’

এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই অভিনন্দন বর্তমানের প্রসঙ্গ তুলেছেন৷ অনেকেই লিখতে শুরু করেছেন, ‘অভিনন্দন বর্তমান ফিরে আসা নিয়ে আমরা উদগ্রীব ছিলাম৷ কিন্তু, আজ আমরা নিশ্চুপ কেন? কেন অর্ণব রায় অন্তর্ধান প্রথম পাতায় স্থান পেল না সংবাদপত্রের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়ের মৃত্যুর খবরটাও সংবাদমাধ্যম চেপে রেখেছিল৷ কোনও গুরুত্ব‌ই দেয়নি৷ পরে মুখরিত প্রতিবাদ আন্দোলনের সামনে ওরা মাথা নত ক‍রতে বাধ্য হয়েছিল৷ আজ‌ও সময় হয়েছে আর‌ও একবার পথে নামর৷ আবারও মুখরিত প্রতিবাদে ছিন্নভিন্ন করতে হবে এদের মুখোশ। আর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের বলতে চাই, আগে মানুষ হোন, তার পর করবেন মানুষের প্রতিনিধিত্ব। নাহলে কিন্তু শেষের সেদিন ভয়ংকর।’

প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন৷ এবার ফেসবুকে বাংলা ভাষায় পোস্ট করে নিজের ক্ষোভ ফের প্রকাশ করলেন এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকা নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়ের স্ত্রী অনীশা যশ৷ ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘‘আমি সকলের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, যে আমার স্বামী অর্ণব রায়কে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমি জোর গলায় বলতে পারি, ও খুবই সৎ এবং নির্ভীক মানুষ এবং সারাদিন কাজ নিয়েই থাকতো এবং কর্তব্যরত অবস্থাতেই নিখোঁজ হয়েছে। আজ ছয়দিন হল, এখন ও তার কোন খবর আমি পাইনি। আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত এবং যারা ওর নামে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করছেন এবং নানা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের আমি দৃঢ়তার সাথে জানাচ্ছি যে আগে ওর সম্পর্কে খোঁজ নিন ভাল করে, অফিসের সকল কর্মচারীদের কাছে খোঁজ নিন। অনর্থক ভিত্তিহীন গুজব ছড়াবেন না। সকলের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, সকলে আমাকে সর্বোতোভাবে সাহায্য করুন, যাতে আমার স্বামীকে আমি ফেরত পাই। ওর বাবামায়ের ও একমাত্র সন্তান, তাই ওকে ছাড়া ওর বাবা, মা এবং আমার বাঁচার অবলম্বন নেই।’’

সাত দিন পরও স্বামীর খোঁজ না পেয়ে আগেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অর্ণব রায়ের স্ত্রী অনীশা যশ৷ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে WBCS অফিসার অনীশা যশ সাফ জানিয়েছেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত৷ এতদিন ধরে পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছি৷ অথচ, কেউ কিছুই বলতে পারছেন না৷ কোথায় গেলে, কীভাবে পাব আমার স্বামীর খোঁজ৷’’

তাঁর আক্ষেপ, ‘‘একসপ্তাহ হয়ে গেল, অথচ কেউ আমার স্বামীর খোঁজ দিতে পারল না৷ আমি চাই ও সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক৷ জেলা প্রশানের লোকজন সবরকম চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন৷ তবে, এখনও পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনও খোঁজ পাইনি৷’’ তিনি আশাবাদী, ‘‘আমার স্বামী কোনও ভাবেই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত ছিলেন না৷ তার কারণ, আমি বৃহস্পতিবার স্বামীর অফিসে গিয়েছিলাম৷ সব ঠিকঠাক ছিল৷’’ কমিশনের তরফে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখানো হলেও তাঁর সাফ জবাব, ‘‘উনি আমার স্বামী৷ সেদিন ওর সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছিল৷ কিন্তু, হঠাৎ যে কী হল…৷’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, সবাই মিলে চেষ্টা করুন, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷ ওর বাবা-মায়ের এক ছেলে৷ ওঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ ওঁদের কাছে অর্ণবকে ফিরেয়ে দিন প্লিজ৷ কেউ আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷’’

গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজকুমার রায়ের মৃত্যুর ক্ষত এখনও শুকায়নি। সেই মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার চেয়ে বহু আন্দোলন মিটিং মিছিল এমনকী মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে নদীয়া জেলায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অর্ণব রায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলার ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কর্মসূত্রে জেলার ১০০ দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার তিনি।

এই নিখোঁজ সংবাদ নিয়ে বিতর্কও তুঙ্গে উঠেছে। শুক্রবার নির্বাচন দপ্তরের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক দাবি করেন, অর্ণববাবু মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। অন্যদিকে অর্ণব রায়ের স্ত্রী অনীতা যশ ফেসবুকে খোলা বার্তা দিয়েছেন, তাঁর স্বামী কোনও অবসাদে ভুগছিলেন না। তিনি এই নিয়ে কোনও রটনা-জল্পনা না করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন৷ তাঁর খোঁজ দেওয়ার জন্য সমস্ত সাধারণ মানুষের কাছেই সাহায্য চেয়েছেন।

এই নিখোঁজ সংবাদ অন্য সাধারণ ভোটকর্মীদের মধ্যেও আশংকা তৈরি করেছে। শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে কিংকর অধিকারী জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন একরম দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অফিসারের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বর্তায় নির্বাচন কমিশনের ওপর৷ তিনি দ্রুত অর্ণববাবুর সুস্থভাবে ফিরে আশার কামনাও করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ডাক দেওয়া হয়েছে৷ নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য নেতা কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন অফিসারের জন্য নির্বাচন কমিশনের আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। এই অবস্থায় কত শীঘ্র অর্ণববাবুর সন্ধান পাওয়া যায়, সেটাই সকল ভোটকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − sixteen =