দিদিমণি কেন নিস্তরঙ্গ? শাহের সঙ্গে ‘সেটিং’ করবেন বলে? কটাক্ষ সেলিমের

দিদিমণি কেন নিস্তরঙ্গ? শাহের সঙ্গে ‘সেটিং’ করবেন বলে? কটাক্ষ সেলিমের

কলকাতা: জ্বলছে দিল্লি৷ দফায় দফায় আশান্তির জেরে প্রাণ গিয়েছে ৩৪ জনের৷ দিল্লিকাণ্ডে আপ-বিজেপি ও দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার গোটা দেশ৷ নিন্দা আদালতের৷ কিন্তু, সেই তপ্ত দিল্লি প্রসঙ্গে পুরীর মন্দিরে পুজো দিয়ে স্রেফ শান্তি প্রার্থন মুখ্যমন্ত্রীর৷ নেই দিল্লি পুলিশ থেকে বিজেপি ও আপ সরকারের সমাচোলনা৷ এমনকি, দিল্লি পুলিশকে ভর্ৎসনা করার পর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতির মধ্যরাতে বদলির নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি মুখ্যমন্ত্রী৷ আর এই নিয়ে ফের সবর বাম-কংগ্রেস৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ? মমতা-অমিত বৈঠককে চ্যালেঞ্জ সুজন, অধীরে৷ কটাক্ষ মহম্মদ সেলিমের৷ অমিত শাহের সঙ্গে সেটিং করতে চাইছেন ওঁরা৷ তবে, সেটিং হবে না৷ ঘোষণা দিলীপের৷ ‘সেটিং’ বিতর্কে গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷

বামেদের অভিযোগ, দিল্লিকাণ্ডে আদতে অমিত শাহের পাশে নীরব সমর্থন করেছেন দলনেত্রী৷ দিল্লিতে হিংসার ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে? কেন ঘটছে? এই নিয়ে বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ কিছুই না কি জানেন না বলেও অভিযোগ বাম নেতৃত্বের৷ যদিও ভুবনেশ্বরে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে তিনি নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘দিল্লিতে যা চলছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ আমরা গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখছি৷ কিন্তু কেন এ সব চলছে, আমি জানি না৷ আমি মনে করি, সবার শান্তি রক্ষা করা প্রয়োজন৷ আমাদের দেশ শান্তির দেশ৷’’ এরপর পুরীর মন্দিরে পুজো দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি আজ দেশবাসীর শান্তির জন্য পুজো দিয়ে গেলাম৷’’

দিল্লির হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সুজন চক্রবর্তী৷ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, আরএসএস ও তাদের দুষ্কৃতী বাহিনী দেশের রাজধানী জ্বালাচ্ছে৷ অথচ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী চুপ! ভুবনেশ্বরে গিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের আগে কি নতুন কোনও বার্তা দিচ্ছেন? দিল্লি পুলিশ, আপ ও বিজেপি সরকারের ভূমিকা নিয়ে কেন নীরব? দিল্লি পুলিশকে ভর্ৎসনা করা বিচারপতির রাতারাতি বদলি নিয়েও কেন কোনও কথা বলছে না? প্রশ্ন বাম নেতৃত্বের৷

মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘দিল্লিতে ১১টি স্কুলে আগুন লাগানো হয়েছে৷ ধর্মস্থানে আগুন লাগানো হয়েছে৷ বাজার, হাট, দোকান টার্গেট করে ভাঙ্গা হয়েছে৷ লুট করা হয়েছে৷ দিল্লি পুলিশের সামনে লুটের মাল ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা৷ এই ঘটনায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পদক্ষেপ বোঝা গিয়েছে, যখন দিল্লি হাইকোর্ট বিচারপতিকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হল৷ মাঝরাতে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নির্দেশে স্বাক্ষর করান হল৷ যিনি বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের নাম ধরে ধরে বলেছিলেন, কেন এফআইআর হবে না৷ এই ফ্যাসিস্ট সরকার গোটা দেশকে জ্বলচ্ছে৷ সংবিধান, আইনের কোনও ব্যাপার নেই৷ তার প্রমাণ হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল৷ যেখন দেখলাম, এই বিচারপতি আগের দিন বলল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন এফআইআর হবে না? এরপর  মাঝরাতে বদলির নির্দেশ৷ এখনবলছে চার সপ্তাহের মধ্যে জানাও কেন এফআইআর হবে না৷ তাহলে আইন ব্যবস্থায়কে কীভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে সেটা দেখলে৷ আর এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু কথা বলছেন না৷ দিল্লির হিংসা দিদিমণি এখন চুপ৷ একেবারে নিস্তরঙ্গ৷ আর তিনি এখন অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন, সেটিং করবে বলে পুজো করছেন৷’’

মমতা-অমিত শাহের ‘সেটিং’ বিতর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘না বুঝতে পেরেছেন, এখন আর সেটিং চলছে না৷ সেজন্য আবার নতুন করে সেটিংয়ের চেষ্টা৷ আমি বলে দিচ্ছি ভাই, অমিত শাহা ব্যাপারটা অন্যরকম আছে৷ যে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দিতে পারে, যে নাগরিকত্ব আইন পাস করাতে পারেন, তিন তালাক দূর করতে পারেন৷ এগুলি দেখে ওঁরা ঘাবড়ে যাচ্ছেন৷ আর তাতে অমিত শাহের সঙ্গে যদি কোন সেটিং করা যাবে না৷ কিন্তু আমাদের সরকার কোন সেটিংয়ে যাবে না৷ আমাদের সরকার এই দেশের স্বার্থে যা যা করা দরকার, সবস্ত কঠিন কাজ, সবই করবে৷’’

দিল্লি জ্বললেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বরং বৈঠক করতে ভূবনেশ্বরে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ মমতার ক্ষমতা থাকলে অমিত শাহের সঙ্গে সভা বাতিল করে দেখাক কটাক্ষ কংগ্রেসের লোকসভার পরিষদীয় দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘যখন দিল্লি জ্বলছে৷ মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত৷ সারা ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এখন গোটা বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে গিয়েছে৷ এই অবস্থায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী চারদিন ধরে বসে আছেন ভূবেনশ্বরে৷ পুরীর মন্দিরে পুজো দিয়ে বিশ্বশান্তির কথা বলছেন৷ কিন্তু দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে কোনও নিন্দা করছেন না৷ দিল্লি ষড়যন্ত্র চলছে৷ সেটা বলছেন না৷ অবাক হয়ে আমরা লক্ষ্য করছি, তিনি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার জন্য ভূবনেশ্বর অপেক্ষা করছেন৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, আপনি ধর্মনিরপেক্ষ মুখ হলে, প্রকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরোধিতা করে থাকলে, অমিত শাহের সঙ্গে আপনার এই বৈঠক বাতিল করুন৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *