নিজস্ব প্রতিনিধি: ৩৫ বছর পর ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রকাশ্য জনসভা করল এসইউসিআই। প্রধান বক্তা ছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ। মূলত আন্দোলন কেন্দ্রিক দল বলেই পরিচিত এসইউসিআই। সেই সঙ্গে দলের নীতিবাদী ভূমিকা বারবার সবার নজর কেড়েছে। তাই সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে প্রভাস ঘোষ বিভিন্ন দল সম্পর্কে কি অবস্থান জানাবেন তা নিয়ে সবারই বেশ কৌতূহল ছিল। তাতে দেখা গেল তৃণমূলকে একাধিক ইস্যুতে আক্রমণ করলেও তাতে ঝাঁজ ততটা ছিল না। তুলনায় সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপিকে অনেক চড়া মাত্রায় আক্রমণ করেছেন তিনি। প্রভাস ঘোষের মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদ রীতিমতো অঙ্ক কষেই যে বিভিন্ন দল সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান বুঝিয়েছেন সেটা স্পষ্ট। তাই প্রশ্ন এই অবস্থান কেন নিলেন তাঁরা? ঘটনা হচ্ছে এসইউসিআই-এর ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে তৃণমূল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। দলের কর্মীরা যে সমস্ত স্টেডিয়াম বা হলঘরে দু’দিন আগে থেকে জমায়েত হয়েছিলেন সেখানে খাবার ও জলের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও তৃণমূলের তরফের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে একটি সূত্রে খবর। যেমন জানা গিয়েছে একটি স্টেডিয়ামে রাতের দিকে কর্মী-সমর্থকদের জন্য দেড় হাজার সেদ্ধ ডিম কে বা কারা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তৃণমূলের তরফেই সেটা করা হয়েছে বলে ধরে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে কোনও পক্ষই ঝেড়ে কাশেনি।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার একাধিক জায়গায় এসইউসিআই-এর একটা ফিক্সড ভোটব্যাঙ্ক আছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমর্থনে তাদের প্রার্থী জয়নগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয় পেয়ে সংসদে গিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সেই অলিখিত জোট আর থাকেনি। কিন্তু তৃণমূল চায় এসইউসিআই সবসময় বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের বিরোধিতা করে যাক। এতে লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আসনগুলিতে তৃণমূল পরোক্ষ সুবিধা পাবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কারণ তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ যারা তাদের ভোট কিছুটা হলেও যদি এসইউসিআই কাটে তাতে পরোক্ষে লাভ হবে তৃণমূলেরই। এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহল। যদিও এই ধারণার কোনও আনুষ্ঠানিক সত্যতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু ঘটনা প্রবাহ যেভাবে এগিয়েছে তাতে এটা কারও মনে হতেই পারে। না হলে এসইউসিআইয়ের মতো একটি বামপন্থী দল কীভাবে সিপিএম, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বামপন্থী দলগুলিকে এতটা চড়া সুরে আক্রমণ করলেও তৃণমূল সম্পর্কে ততটা গলা ফাটাল না? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। সকলেই মনে করেছিলেন এতদিন পরে ব্রিগেড সমাবেশ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা প্রকাশ্যে তুলে ধরে চড়া সুরে আক্রমণ শানাবেন প্রভাস ঘোষ। বক্তব্য রাখবেন বেকার সমস্যা নিয়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে হিংসা হয়েছে সেই বিষয়টি প্রভাস তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরলেও সেখানে চড়া সুর লক্ষ্য করা যায়নি। সব মিলিয়ে প্রভাস ঘোষের বক্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর সেটা অন্য মাত্রা পেয়েছে যখন দেখা গিয়েছে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যে এসইউসিআইয়ের ব্রিগেড সমাবেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এটা সাম্প্রতিককালে রাজ্য রাজনীতিতে দেখা যায়নি, যেখানে অন্য দলের কর্মসূচিকে শাসক দল শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তাই ব্রিগেড সমাবেশে প্রভাস ঘোষের বক্তব্য অনেক প্রশ্ন তুলে দিল।