জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে মমতা থাকলেও কেন তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন কাকলি-কল্যাণ?

জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে মমতা থাকলেও কেন তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন কাকলি-কল্যাণ?

kakoli

নিজস্ব প্রতিনিধি:  সচরাচর তৃণমূল রাজনীতিতে এমনটা দেখা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সুপ্রিমো। তাই মমতা কোনও একটি অবস্থান নিলে দলের সবাই সেটা মেনে চলেছেন, এমনটাই এতদিন দেখা গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর একটু অন্যরকম ছবি দেখা যাচ্ছে। আর তাতেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। নাম না করে সরাসরি  জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়ালেও দলের দুই সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বনমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন।

 

ঘটনা হল চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন রেশন দুর্নীতি মামলায় সদ্য গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শুক্রবার মন্ত্রী দাবি করলেন শীঘ্রই তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন ও ছাড়া পেয়ে যাবেন। এমনকী নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ করে বোঝাতে চাইলেন যে সেদিনই তিনি হয়ত ছাড়া পেয়ে যাবেন। শুক্রবার মন্ত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। আর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে এদিন বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের সামনে জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেন, তিনি দলের পাশে রয়েছেন এবং দলও তাঁর পাশে রয়েছে। সেই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেন, খুব তাড়াতাড়ি তিনি ছাড়া পেয়ে যাবেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন,” মমতাদি-অভিষেক সব জানে। বিজেপি আমাকে ফাঁসিয়েছে। দলের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। আমি নির্দোষ। চার দিনের মধ্যে আমি মুক্ত হয়ে গিয়েছি (যাব) ! দু’দিনের মধ্যে সত্য  প্রকাশ হবে। খুব তাড়াতাড়ি আমি ছাড়া পাব”।‌ সেই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ৬ তারিখের কথা বলেন। কার্যত বোঝাতে চেয়েছেন সেদিনই তিনি নাকি মুক্তি পেয়ে যাবেন। কিসের ভিত্তিতে এমন দাবি জ্যোতিপ্রিয় করছেন তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করায় বিষয়টি নিয়ে তাঁকে নিশানা করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

জ্যোতিপ্রিয়ের দাবি দল তাঁর পাশেই রয়েছে। কিন্তু কল্যাণের পাশাপাশি বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার যে কথা বলছেন তাতে অন্য মানে করা যেতেই পারে। উল্লেখ্য গ্রেফতার হওয়ার পর জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেছিলেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার সময় রাজ্যের বনমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল,”গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভাল কাজ করেছে। তাঁরা আমাকে শিকার করেছেন।” এরপরে আবার বলতে শোনা গিয়েছিল,”যা করার বিজেপি করেছে. শুভেন্দু অধিকারী করেছে।”

 

শুক্রবার কার্যত সেই একই কথা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। ঘটনা হল পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিন পরেই তৃণমূল বুঝিয়ে দেয় দল তাঁর পাশে নেই। তবে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর দল প্রকাশ্যে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। একই ভাবে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশেও রয়েছে দল। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর উত্তর চব্বিশ পরগনায় তাঁর সমর্থনে মিছিল বের করেছে তৃণমূল। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাম না করে জ্যোতিপ্রিয়ের পক্ষেই কথা বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে দল যাতে আরও বেশি করে তাঁর পাশে থাকে সেই লক্ষ্যেই শুক্রবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রীতিমতো জেনে বুঝেই মমতা-অভিষেকের নাম করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে জ্যোতিপ্রিয় যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের নাম করেছেন তাতে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে কল্যাণ বিষয়টি নিয়ে সরাসরি জ্যোতিপ্রিয়কে নিশানা করে বলেন,”কথায় কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে টানাটানি কেন? মমতা-অভিষেক সব জানেন মানে কী? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী জানবেন? জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যদি দুর্নীতি হয়েছে বলে থাকে, তাহলে আগে দুর্নীতি নিয়ে ও পদক্ষেপ করেনি কেন? এটা এক নম্বর প্রশ্ন।

 

আর দু’নম্বর প্রশ্ন, দুর্নীতি নিয়ে উনি কোনও চিঠি লিখেছিলেন কী? বন্ধ করাতে কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?” এখানেই শেষ নয়, রীতিমতো ঝাঁজালো সুরে কল্যাণ আরও বলেন,”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষটা কি আছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিফ মিনিস্টার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করে একজনকে (পড়ুন জ্যোতিপ্রিয়) একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর যদি পদস্খলন হয়ে থাকে, সে যদি বেইমানি কোথাও করে থাকে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষটা কোথায়? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষটা কোথায়?” এর আগে বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার একই ভাবে জ্যোতিপ্রিয়কে নিশানা করেছেন। বৃহস্পতিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে কাকলিকে বলতে শোনা গিয়েছে,”ওটা ওঁর পার্সোনাল ক্যাপাসিটিতে উনি করেছেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কি করেছেন তার জন্য দলের ভাবমূর্তি কেন নষ্ট হবে?” রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা যিনি একটা সময় উত্তর চব্বিশ পরগনায় দলের সভাপতি ছিলেন, তিনি ইডি হেফাজতে থাকায় আপনাদের কী কোনও সমস্যা হচ্ছে?

এই প্রশ্নের উত্তরে কাকলি বলেছেন, “প্রত্যেক বছরই বিজয়া সম্মিলনী করা হয় এবং একেবারে বুথ স্তরের কর্মীদের নিয়েই করা হয়। সমস্যা যখন আমরা ফেস করব তখন বুঝতে পারব সমস্যা হয় কিনা। এখন অবধি কোনও সমস্যা নেই।”  তাই এটা স্পষ্ট কল্যাণ ও কাকলি এই ইস্যুতে জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে নেই। তাই দলের অনেকেই তাঁর পাশে নেই সেটা বুঝেই কী তৃণমূলের দুই সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মমতা ও অভিষেকের নাম করে দলকে পাশে টানতে চাইছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক? যথারীতি বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে যেভাবে দল ছেঁটে ফেলেছে সেটা যাতে তাঁর সঙ্গে না করা হয় সেই জন্যই কী জ্যোতিপ্রিয়ের এই মরিয়া চেষ্টা? তাতে তিনি কতটা সফল হবেন বা দলে আগের মতোই গুরুত্ব পাবেন কিনা সেটা সময়ই বলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *