বিশ্বজিৎ পাল, ক্যানিং: একদা বাম গড় বাসন্তীজুড়ে এখন সবুজের ছোঁয়া৷ ২০১৬ সালে রাজ্য বিধানসভা ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী (তপঃ) বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের ৭ বারের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী সুভাষ নস্করকে পরাজিত করে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর৷ সেই সঙ্গে ভেঙে যায় বাসন্তীর লাল দূর্গ৷
গত বিধানসভা ভোটে গোবিন্দ চন্দ্র নস্করের হাত ধরেই ঘাস ফুল ফুটেছিল বাসন্তীতে৷ এখন পাখির চোখ ২০২১৷ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হবে কে? বয়সের ভারে ন্যূব্জ গোবিন্দবাবু৷ তাঁর পক্ষে আসন্ন নির্বাচনে ভোটে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না বলেই সূত্রের খবর৷ বিকল্প হিসাবে উঠে আসছে তাঁরই রাজনৈতিক শিষ্য অর্ণব রায়ের নাম৷ এক সময় গোবিন্দবাবুর হাত ধরেই রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছিলেন অর্ণববাবু৷
আরও পড়ুন- আধার কার্ডের ভুল সংশোধন করতে চান? কোথায়, কীভাবে করাবেন, পড়ুন বিস্তারিত
২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটলেও বাসন্তীর ঘাঁটি ছিল তাঁদের দখলে। ওই বছর বামফ্রন্ট প্রার্থী সুভাষ নস্কর প্রায় ৫ হাজার ভোটে পরাজিত করেন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী অর্ণব রায়কে৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হতে থাকে লাল রং৷ ২০১৬ সালে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেন গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর৷
১৯৭১ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ক্যানিং বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন গোবিন্দ নস্কর। তিনি তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরও খুব প্রিয় ছিলেন৷ পাঁচ বারের বিধায়ক গোবিন্দবাবু পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ থেকে জয়ী হন৷ রাজ্যে কংগ্রেস জমানায় সুন্দরবন উন্নয়ন বিষয়ক দফতর, মৎস্য, শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কংগ্রেসের জেলা সভাপতিও ছিলেন। কিন্তু শরীর আর সঙ্গ দিচ্ছে না ৭৯ বছরের এই প্রবীণ নেতার৷ ফলে আসন্ন বিধানভা ভোটে বাসন্তী তপঃ বিধানসভা কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবে সেই নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে৷ রাজনৈতিক মহলে জোড় গুঞ্জন গোবিন্দ চন্দ্র নস্করের প্রিয় রাজনৈতিক শিষ্য অর্ণব রায়কেই হয়তো টিকিট দেওয়া হবে৷
১৯৮৪ সালে গোবিন্দবাবুর হাত ধরেই রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন অর্ণব রায়৷ ৯ বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনার কংগ্রেসের সভাপতি, প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক এবং ১২ বছর সর্ব ভারতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন অর্ণববাবু। ২০১১ সালে তৎকালীন রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে কংগ্রেস এবং তৃণমূল বাসন্তী তপঃ বিধানসভা কেন্দ্রে জোট প্রার্থী হন তিনি। কিন্তু পরাজিত হন৷ এরপর ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়নগর কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হন৷ কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৮ সালে জুলাই মাসে অর্ণব রায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন৷ বর্তমানে তিনি ক্যানিং-১ ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সহ সভাপতি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিং,কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সৌমেন মিত্র সহ একাধিক পোর খাওয়া রাজনীতিবিদের সংস্পর্শে এসেছেন৷
আরও পড়ুন- জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র, সিপিএমের দিকে আঙুল তুললেন সৌগত
২০২১-এ বাসন্তী তপঃ কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে অর্ণব রায়ের পাশাপাশি উঠে এসেছে আরও কিছু নাম৷ শিবনাথ মণ্ডল, বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পতিত হাজারী, গোসাবা কেন্দ্রের বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের ছোট ভাই ও অন্যান্য কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু বাসন্তীতে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তৃণমূলের হাইকমান্ডের কপালে৷ গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে এই কেন্দ্রে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝে মধ্যেই চলে গুলি, বোমাবাজি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকবার সুন্দরবন সফরে এসে বাসন্তী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ কড়াবার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাসন্তী আছে বাসন্তীতেই।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্ণব রায় বলেন, বাসন্তী কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবে সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত৷