কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, চার্জশিটে রাজীব-আডবানী-সহ ৪২ হেভিওয়েট! কী ছিল হাওয়ালা জৈন মামলা?

কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, চার্জশিটে রাজীব-আডবানী-সহ ৪২ হেভিওয়েট! কী ছিল হাওয়ালা জৈন মামলা?

কলকাতা: রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের নতুন পর্ব ‘হাওয়ালা’৷ সংঘাতের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, হাওয়ালা জৈন মামলার চার্জশিটে নাম ছিল রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের৷ তা নিয়ে সংঘাত তুঙ্গে ওঠে৷ মমতার অভিযোগ খারিজ করে রাজ্যপালের পাল্টা দাবি, তাঁর নাম নয়৷ বরং ওই চার্জশিট নাম ছিল অজিত পাঁজা, যশবন্ত সিংয়ের৷ কিন্তু রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বন্দ্বের এই নতুন অধ্যায় আসলে কী? কী এই  ‘হাওয়ালা-জৈন’ মামলা? 

আরও পড়ুন- মমতার ব্যাপক প্রশংসা, ধনকড়ের ইস্তফা চাইলেন ‘জৈন’ মামলা ফাঁসের কারিগর

এর উত্তর রয়েছে ইতিহাসের পাতায়৷ সালটা ১৯৯১৷ কাশ্মীর থেকে আশফাক হুসেন লোন নামে এক হিজবুল জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ জেরার মুখে সে জানায়, হাওয়ালার মাধ্যমে তার সংগঠনের হাতে টাকা আসত৷ আর এই টাকা পাঠাতেন সুরেন্দ্র কুমার জৈন নামে এক শিল্পপতি৷ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁর কিছু আত্মীয়ও৷  আশফাকের বয়ানের ভিত্তিতে সুরেন্দ্র কুমারের খোঁজ শুরু করে পুলিশ৷ এবং তদন্তে নেমে বিস্ফোরক তথ্য হাতে আসে৷ সুরেন্দ্রর হাতে লেখা দুটি ডায়েরি ও নোটবুর থেকে পুলিশ জানতে পারে হাওয়ালার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হেভিওয়েট নেতাদের দিয়েছেন তিনি৷ ডায়েরি থেকে উঠে আসে ৪২ জন রাজনীনিবিদের নাম!

জানা যায়, ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে এই রাজ নেতাদের ৫২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন তিনি৷ এই ডায়েরিতে যাঁদের নাম লেখা ছিল তাঁরা হলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবানী, আরেক প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী দেবী লাল, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিং, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনডি তিওয়ারি, কেরলের বর্তমান রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান৷ প্রত্যেকেই নিয়েছিলেন মোটা অঙ্কের টাকা৷ পুলিশি জেরার মুখে সুরেন্দ্র কুমার জৈন জানান, ক্যাপ্টেন সতীশ শর্মার মাধ্যমে রাজীব গান্ধীর কাছে টাকা পৌঁছেছিলেন তিনি৷ যার বদলে তাঁকে বিদ্যুৎ প্রকল্প পেতে সাহায্য করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী৷ ডায়েরিতে লেখা তথ্য অনুযায়ী, সেই টাকার পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি টাকা৷ 

আরও পড়ুন- করোনা হয়নি কবীর সুমনের, হাসপাতালে গিয়ে দেখা করলেন মদন

পরে অবশ্য এই লেনদেনের কোনও তথ্যই পাননি তদন্তকারী অফিসাররা৷ অভিযোগ স্বীকার করেননি কেউই৷ চার্জশিটে যাঁদের নাম ছিল, তাঁদেরও অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতেই এই তথ্য সাজানো হয়েছিল বলেই মেনে নেন অফিসাররা৷ এত বছর পর সেই মামলার রেশ টেনেই রাজ্যপালকে আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী৷ বদলে অজিত পাঁজা ও যশবন্ত সিংয়ের নাম তুলে আনেন রাজ্যপাল৷ তিনি বলেন, ‘‘হাওয়ালার চার্জশিটে আমার নাম ছিল না৷ আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই৷’’    
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =