কলকাতা: আরো একবার রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ চড়ল। হঠাৎ মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্মীরতন শুক্লা। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি হাওড়া জেলা সভাপতির পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন। দলবদলের আবহে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন মন্ত্রীর ফের একবার দলত্যাগ আবারো নতুন বিতর্কের এবং জল্পনার সৃষ্টি করলো পশ্চিম বাংলায়। তবে হঠাৎ কেন এই পদত্যাগ লক্ষ্মীরতন শুক্লার, তাও আবার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতেই, এই নিয়ে স্বাভাবিকভাবে উঠেছে প্রশ্ন। আর এখানেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরূপ রায় দ্বন্দ্বের চিত্র সামনে চলে আসছে। তাহলে কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদ্রোহ এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লার তৃণমূল কংগ্রেস মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পেছনে অরূপ দ্বন্দ্ব কাজ করছে? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ মহলে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লা বলেছেন, তিনি এই মুহূর্তে আর রাজনীতিতে থাকতে চান না, নিজের ক্রিকেটের জগতে ফিরে যেতে চান। যদিও অন্য দলে যাওয়ার যে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল তা একেবারেই ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেন লক্ষ্মীরতন। তবে তিনি যে এই মুহূর্তে রাজনীতি করতে চান না, এই ব্যাপারটা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যেই। এই মুহূর্তে রাজনীতি থেকে বেরিয়ে গেলেও, পরবর্তী ক্ষেত্রে অর্থাৎ বিধানসভা নির্বাচনের পরে লক্ষ্মীরতন শুক্লা ফের রাজনীতিতে আসবেন কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা হচ্ছে না কারোর। এদিকে আসলে ও তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে আসবেন নাকি অন্য দলে যাবেন, সেই ব্যাপার নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা। অন্যদিকে, বিক্ষুব্ধ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ইতিমধ্যেই দোলাচলে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাওড়া সদর তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদ সম্পর্কে অবহিত সকলেই। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, লক্ষ্মীরতন শুক্লা অরূপ রায় ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন না।
কিছু সপ্তাহ আগে হাওড়ার লেক ল্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে নিজের অনুগত নেতাদের নিয়ে সভা করেছিলেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। সেখানে তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক, প্রাক্তন মেয়র পরিষদ সদস্য এবং প্রাক্তন কাউন্সিলর উপস্থিত থাকলেও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না সদরের সভাপতি লক্ষ্মীরতন শুক্লা। এদিকে সেদিন হাওড়াতেই পাল্টা চা চক্রের আয়োজন করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অনুগামীরা। এখানে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস তালিকায় নাম লিখিয়েছেন লক্ষ্মীরতন? যদি তেমনটা না হয়ে থাকে, তাহলে হঠাৎ এই রকম একটা দোলাচল পরিস্থিতিতে কেন মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করলেন তিনি সে ব্যাপারে বিতর্ক হওয়া আবশ্যিক। প্রসঙ্গত, নিজের মন্ত্রিত্ব নিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লার এজে একটা চাপা ক্ষোভ ছিল তা প্রকাশ পেয়েছে বেশ কয়েকবার। সেই থেকে অনুমান করা সম্ভব, হয়তো সেই ক্ষোভ এবং রাগ থেকেই নিজের মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন তিনি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, হয়তো লক্ষ্মীরতন শুক্লা নিজের মতো কাজ করতে বাধা পাচ্ছিলেন, তাকে হয়তো নিজের মত অনুযায়ী কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না, সেই কারণেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এইখানেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে দলছুট হলেন লক্ষ্মীরতন?
রাজনীতি থেকে অবসর চান তিনি, এই মর্মে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে লক্ষ্মীরতন শুক্লা মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লা জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চান, পুনরায় ক্রিকেটের দুনিয়ায় ফিরে যেতে চান। তবে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে তিনি যোগ দেবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি এও জানিয়েছেন, বিধায়ক পদ থেকে তিনি এখন ইস্তফা দিচ্ছেন না, মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। এদিকে নবান্ন সূত্রে খবর, লক্ষ্মীরতন শুক্লার পদত্যাগপত্র ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে যুক্তি দিয়েছেন সেই যুক্তিকে মর্যাদা দিয়েই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন তিনি।