প্রণব-প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ঢাকুরিয়া, এখান থেকেই তৈরি হয়েছিল বাংলার রাজনীতির রোডম্যাপ

প্রণব-প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ঢাকুরিয়া, এখান থেকেই তৈরি হয়েছিল বাংলার রাজনীতির রোডম্যাপ

 

কলকাতা: তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে ঢাকুরিয়ার চার তলা বাড়িটিতে৷ নিস্তব্ধ বাড়িটির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি কমিয়ে বহু মানুষেই একবার চেয়ে দেখছেন দোতলার দিকে৷ এখানেই যে থাকতেন ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ কলকাতার এই বাড়িটি শুধু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঠিকানা ছিল না, ছিল একাধিক রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী৷ এই বাড়ি দেখেছে বাংলার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন৷ কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান৷ তারপর বামেদের কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা৷ এই বাড়ি সাক্ষী থেকেছে বাংলায় বামেদের তিন দশকের অবসান৷ ২০০৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল সিপিএমের ভাঙন৷ ২০১১ সালে পতন হয় বাম জমানার৷ 

আরও পড়ুন- শেষবার বাসভবনের পৌঁছল প্রণব-দেহ, মাথা নুইয়ে প্রণাম মোদীর

অনেকেই মনে করেন বাংলায় রাজনীতির রোডম্যাপ তৈরি হয়েছিল প্রণব মুখোপাধ্যায় আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যরাতের বৈঠকে৷ এক রাজনৈতিক ভাষ্যকারের কথায়, ‘‘২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে ‘মহাজোট’, কিংবা ২০০৯ এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের জোটবন্ধন- আসন বন্টন নিয়ে খুশি ছিলেন না বহু কংগ্রেস নেতা৷ কিন্তু প্রণববাবুর অধিনায়কত্ব জয়ের পথে চালিত করেছিল৷ নির্বাচনের আগে অধিকাংশ বৈঠকই হয়েছিল তাঁর এই ঢাকুরিয়ার বাড়িতেই৷’’ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও নিজের পাড়াকে ভোলেননি তিনি৷ সুযোগ পেলেই চলে আসতেন এখানে৷

 

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাক পীযূষ রায় (৮০) পুরনো দিনের স্মৃতি আওড়ে বললেন, ‘‘বুদ্ধ মন্দিরের সামনের রাস্তাটা যখনই পুলিশ ঘিরে ফেলত, তখনই বুঝতে পারতাম উনি আসছেন৷ তাঁর নির্দেশ ছিল, লেকে ঢুকতে যেন কোনও মানুষকে বাধা দেওয়া না হয়৷ প্রণববাবুর সঙ্গে দু’বার ধাক্কা লেগেছিল আমার৷ আমি হাত জোড় করে নমস্কার করেছিলাম৷ উনিও বিনীতভাবে হাত জোড় করে নমস্কার করেছিলেন আমাকে৷’’

আরও পড়ুন-  প্রণবের দীর্ঘ ৫ দশকের রাজনৈতিক জীবনে ৫টি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা

 

জীবনের অধিকাংশ সময়ই দিল্লিতে কাটিয়েছিলেন  প্রণববাবু৷ কিন্তু এখানকার মানুষ তাঁকে স্থানীয় অভিভাবক হিসাবেই গণ্য করতেন৷ স্থানীয় এলাকার সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত ছিলেন প্রণববাবুও৷ গত তিন দশক ধরে প্রণববাবুর কলকাতায় ঠিকানা ছিল ঢাকুরিয়া৷ স্থানীয় পাড়ায় শনি পূজার স্পনসরও ছিলেন তিনি, জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা আশীষ জানা৷ অপর এক প্রতিবেশি অপর্ণা গুই বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর যখন প্রণববাবু প্রথম এই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন, সেই দিনটা ছিল খুবই স্পেশ্যাল’’৷ তাঁর বিনম্র স্বভাবেই প্রতিবেশীদের একজন হয়ে উঠেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =