টিটাগড়ে খুনের নেপথ্যে ‘ব্যক্তিগত শত্রুতা’! মন্তব্যে বিরত থাকার আর্জি পুলিশের

টিটাগড়ে খুনের নেপথ্যে ‘ব্যক্তিগত শত্রুতা’! মন্তব্যে বিরত থাকার আর্জি পুলিশের

বারাকপুর: টিটাগড়ে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে গুলি করে খুনের ঘটনার পর থেকে উত্তাল শিল্পাঞ্চল৷ চলছে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ৷ আগুন জ্বালিয়ে চলছে বিজেপির পথ অবরোধ৷ বিজেপি নেতাকে খুনের ঘটনায় সরকারি পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন বারাকুরের বিজেপি সংসদ অর্জুন সিং৷ বিজেপি সাংসদের এহেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিজেদের অবস্থান জানান রাজ্য পুলিশ৷ কী কারণে খুন হয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়েও টুইটে দেওয়া হয়েছে ইঙ্গিত৷

রাজ্য পুলিশ ও বিজেপি সাংসদের অবস্থান ঘিরে নতুন করে চড়তে শুরু করেছে চাপানউতোর৷ বিজেপির অভিযোগ, ঘটনাস্থল থেকে ঢিক ছোঁড়া দূরে একটি ওষুধের দোকানে থাকা ৪টি সিসিটিভি ক্যামার মধ্যে ১টি আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছে৷ বিজেপি অভিযোগ তুললেও ওই ওষুধের দোকান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে পুলিশ৷ গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ৷ পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ৷ এরপর আজ সকালে নাম না করে রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘তদন্তের আগে কোনও সিদ্ধান্তে আসবেন না৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করবেন না৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মন্তব্য তদন্তে হস্তক্ষেপের নামান্তর৷ এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন৷’’ পরে রাজ্যপুলিশের তরফে টুইটে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘টিটাগড়ে খুনের নেপথ্যে থাকতে পারে ব্যক্তিগত শত্রুতা৷ খতিয়ে দেখা হচ্ছে খুনের সম্ভাব্য আরও কারণ৷’’

 

 

রবিবার ভরসন্ধ্যায় দু’টি বাইকে মণীশ শুক্লর উপর হামলা চালায় ৪ দুষ্কৃতী৷ বিজেপি নেতাকে গুলি করে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা৷ গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ওই বিজেপি নেতা৷ পরে হাতপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়৷ ঘটনার অদূরে থাকা ওষুধের দোকানে থাকা ৪টি সিসিটির মধ্যে এক সিসিটিভি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলছে বিজেপি৷ ঘটনার নয় মণীশ শুক্লর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটি থাকার খবর দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল বলে আশঙ্কা স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের৷ কীভাবে খুন, পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও শাসকদল ও পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন অর্জুন সিং৷

টিটাগড়ে বিজেপি নেতা খুনের ঘটনায় বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের মন্তব্য, ‘‘‌গোটা ঘটনায় পুলিশ ও তৃণমূলে যৌথ অপারেশন চালিয়েছে৷ আমার কাছে খবর আছে, দুই চেয়ারম্যান উত্তম দাস ও প্রশান্ত চৌধুরী এবং রাজেন্দ্র চৌধুরী ও রাজেন্দ্র যাদব পুলিশের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেন৷ কারণ, যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে তা পুলিশই ব্যবহার করে৷ খুব সম্ভাবনা রয়েছে, লাটবাগান থেকে অস্ত্র বেরিয়ে পরে সেই অস্ত্র ফিরে গিয়েছে লাটবাগানে৷’’

আজ সকালে নিহত মণীশ শুক্লর বাড়িতে যান বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় ও বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং৷ ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে অরবিন্দ মেনন৷ মণীশ শুক্লর খুনের নেপথ্যে তৃণমূল ও পুলিশ যৌথভাবে ‘অপারেশন’ রয়েছে বলে অভিযোগ অর্জুন সিংয়ের৷ আজ পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সরসরি এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছে যান অরবিন্দ মেনন৷ সেখানে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়৷ সেখানেই চলছে মৃত বিজেপি নেতার ময়নাতদন্ত৷

টিটাগড়ে বিজেপি নেতার খুনের ঘটনায় সবর হয়েছেন রাজ্যপাল৷ রবিবার রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্রুত কথা বলতে চেয়ে তিনি বার্তাও পাঠিয়েছেন বলেও দাবি করেন রাজ্যপাল৷ কিন্তু সে ব্যাপারও কোনও সদুত্তর পাননি বলেও টুইটারে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল৷ টুইটের শেষে তিনি লিখেছেন, এই নিস্তবদ্ধতাই অনেক কিছু বলে যায়৷ আজ স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে রাজভবনে বৈঠকে বসেছেন রাজ্যপাল৷ বৈঠকের আগে বাংলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রসঙ্গ তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন রাজ্যপাল৷

রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধেও তোলেন অভিযোগ৷ বিজেপি নেতা খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়৷ এতদিনের সঙ্গীর মৃত্যুতে শোকার্তও প্রকাশ করেছেন অর্জুন সিং৷ তাঁর দাবি, ‘‌মণীশ আধ ঘণ্টা আগে অবধি আমার সঙ্গে ছিল৷ আমরা বাউড়িয়া থেকে বৈঠক সেরে ফিরছিলাম৷আমি কৈলাস বিজয়বর্গীয় সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে রওনা হই, আর ও চা খেতে চলে আসে টিটাগড়ে পার্টি অফিসের সামনে৷ আমরা যদি দু’‌জনে সঙ্গে থাকতাম তবে হয়তো বেঁচে যেত বা আমরা দু’‌জনেই মরে যেতাম৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *