কেন রক্তাক্ত নির্বাচন দেখে বাংলা? সারা দেশ থেকে কেন আলাদা?

কেন রক্তাক্ত নির্বাচন দেখে বাংলা? সারা দেশ থেকে কেন আলাদা?

কলকাতা: প্রতিবার কেন রক্তাক্ত নির্বাচন দেখে পশ্চিমবঙ্গ? বাঙালিকে দেশে ও দুনিয়ার দিকে দিকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। যতদূর বলতে পারি, এই প্রশ্নের উত্তর অন্তর্নিহিত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিন্যাসে। পাঁচ বছর শাসকদলের পাকাপোক্ত অবস্থান সমাজের একটি অংশকে রুজিরোজগার সুবিধা করে দেবে – এমন ধারণা থেকেই নির্বাচনকালীন হিংসার জন্ম হয়। হিংসার সরাসরি ফল রক্তপাত, খুন কিংবা অন্য কোনপ্রকারে মৃত্যু।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের বগ্লাহীন রাজনৈতিক হিংসার জন্য দোষারোপ করা যথার্থ। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের মদতপুষ্ট গুণ্ডারা হিংসায় সরাসরি যুক্ত হয়েছে বা হিংসায় ইন্ধন দিয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যেরর রাজনৈতিক হিংসার ইতিহাস শুধু গত ১০ বছরেই সীমাবদ্ধ নয়। বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছর এবং তারও আগে থেকেই মানুষ রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছে। অতীতের সেই রক্তাক্ত দিনের সাক্ষী মমতা নিজেও। তিনি জানেন, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে ‘ক্যাডার-রাজ’ একমাত্র রাস্তা। যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের নামে দলের সক্রিয় ক্যাডারে পরিণত করার রাস্তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দেখিয়ে গিয়েছে সিপিএম পরিচালিত বামফ্রন্ট। সফল এই পথকে আপন করে নিয়েছেন মমতাও। এলাকায় ক্লাবের অনুদান থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ, আমজনতার অধিকার এলাকার বাহুবলী নেতাদের হাতে হস্তান্তরিত করার অভিযোগ উঠেছে বারবার। সেই বাহুবলীরা শাসকদলের স্বার্থরক্ষা করতে নির্বাচনের সময়ে রক্তক্ষয়ী লড়াই বা খুনখারাপিতে সামিল তো হবেই। দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গে এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে।

রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় খুন-সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাত আলাদা মাত্রা পায়। কারণ সেই আঞ্চলিক ক্ষুদ্র স্বার্থরক্ষা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, এলাকায় একটি মাছের ভেড়ীর অধিকার কোন পক্ষের হাতে থাকবে, তা ঠিক করে দেয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আগামী পাঁচ বছর পেটের ভাত নিশ্চিত করতে প্রতিবেশির দিকেই দাঁ – কাটারি হাতে তেড়ে যেতে হয়েছে – এমন ঘটনাও বিরল নয়। রাজ্য সরকার সেই বাড়ির ছেলে-মেয়েগুলির কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারলে পরিস্থিতি বদলাতে পারত। ভেড়ি দখলে পার্টির মুখাপেক্ষি হতে হত না বা এলাকার সেই বাহুবলী নেতাকে কাটমানি দেওয়ার প্রশ্নই উঠত তা। নির্বাচন হয়ে উঠত শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের উৎসব। কিন্তু পুরানো ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − two =