নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেও ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত বহু ভোটকর্মী!

নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেও ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত বহু ভোটকর্মী!

 

কলকাতা: রাজ্যে আজ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের শেষ দিন। আর ঠিক দুদিন পরেই ভোট গণনা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালট না পেয়ে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকলেন বহু কর্মী। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে ভোট গণনার আগে প্রতিটি ভোটকর্মীর কাছে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানালো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার রাজ্যের ৪ জেলার ৩৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে চলছে ভোটগ্রহণ। আজই ৮ দফার নির্বাচনের শেষ দিন। আগামী ২ মে ফল ঘোষণা দীর্ঘ দু’মাসের মহাযুদ্ধের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালট অধরা বহু কর্মীর কাছে। ঐক্য মঞ্চের তরফে এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ জানালেও নির্বাচনী আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, ‘ধৈর্য্য ধরুন। নিশ্চয়ই পাবেন।’ অবশ্য এখন তাদের বক্তব্য, পোস্ট অফিসে গন্ডগোল হতে পারে। কমিশনের কোনও ত্রুটি নেই। ঐক্য মঞ্চের তরফে এই নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে, ‘‘ভোটকর্মীদের ভোটের ডিউটি পালনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যতটা সতর্ক, তাদের পোস্টাল ব্যালট দেওয়ার ব্যাপারে ততটাই উদাসীন। এটা চরম লজ্জার।’’

অনেক ভোটকর্মী ইতিমধ্যেই পোস্টাল ব্যালট পেয়ে ভোটদান করলেও বহু ভোট কর্মীই এখনও ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য পোস্টার ব্যালট পাননি৷ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘ভোট গণনার আগেই প্রতিটি ভোটকর্মীর ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিটি জেলার নির্বাচনী আধিকারিক সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভোটকর্মীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করুক৷ আগে সমস্ত ভোটকর্মীর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করে তারপর ভোট গণনা হোক।’’

এই বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল ডেবরা বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা বৃন্দাবনচক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শ্রীকান্ত জানা’র সঙ্গে। নির্বাচনে তাঁর ডিউটি পড়েছিল চন্দ্রকোনা বিধানসভা কেন্দ্রে। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ভোটের আজ শেষ দিন। এখনও পর্যন্ত পাইনি পোস্টাল ব্যালট। আমার গ্রামের ৬-৭ জন ভোটকর্মীর পোস্টাল ব্যালট এলেও আমারটাই এখনও আসেনি। বারবার পোস্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ করছি, ওখান থেকে বলছে এখনও আসেনি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আবেদন করেছি। ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপেও আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভোট দিতে পারলাম না।’’ শ্রীকান্তবাবুর বন্ধু ভগীরতপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বিশ্বজিৎ খাটুয়ার সঙ্গে কথা বলা হলে তিনিও একই বিষয় জানান৷ খড়গপুর সদর কেন্দ্রের ১৪৮/এ নম্বর বুথে ভোট কর্মীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলেন না তিনি।

যোগাযোগ করা হয়েছিল শালবনী বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা সুকান্ত চক্রবর্তীর সঙ্গেও। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের রামবেড়িয়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সুকান্ত জানিয়েছেন, “চেনা-জানার মধ্যে যাদের জিজ্ঞেস করেছি তারা সকলেই পোস্টাল ব্যালট পেয়ে গিয়েছে। শুধু আমি বাকি রয়েছি। পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। বলেছিল সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে যেতে বলেছিল। কিন্তু করোনার জন্য তারপর থেকে আর যাওয়া হয়নি।” সুকান্তবাবুর বাড়ি শালবনীতে নির্বাচন হয়েছে একদম প্রথম দফায়, গত ২৭ মার্চ। ডিউটি পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্রের ১০২ নম্বর বুথে। সেখানেও ভোট হয়ে গিয়েছে ১ এপ্রিল। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত নিজের ভোটদান করতে পারেননি সুকান্ত৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, করোনা আবহে জীবনের ঝঁকি নিয়ে নির্বাচন করানোর  গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যারা পালন করলেন, তাঁর কেন ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? কেন এখনও পৌঁছল না ব্যালট? ভোটকর্মীদের ভোটদান প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত রাখার দায় নেবে তো কমিশন? এটাই কি নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতার বিজ্ঞাপন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *