কলকাতা: নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ ও আন্দোলন অব্যাহত মুর্শিদাবাদে৷ ১০০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে মুর্শিদাবাদের জেলা নির্বাচন আধিকারিকের দপ্তরে ডেপুটেশন ভোটকর্মীদের৷ ভোটের প্রশিক্ষণ বয়কট করে শনিবার বিক্ষোভ দেখান ভোটকর্মীরা৷ সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে জেলার মহকুমা শাসকদের কাছে লিখিতভাবে একগুচ্ছ দাবিও জনানো হয়৷
প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে ভোটকর্মীদের বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে কাকদ্বীপেও। ‘কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার, আর হব না রাজকুমার’, ওঠে স্লোগান৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়েক মৃত্যু হয়৷ ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবছরও বিভিন্ন ভোটের প্রশিক্ষণে ভোটকর্মীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার দাবিও জানানো হয়৷
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে ভোটকর্মীরা জড়ো হয়ে মিছিল করে মহকুমা শাসকদের ডেপুটেশন দেন৷ ১০০% বুথে আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবি জানানো হয় এদিন৷ নিরাপত্তা না পেলে ভোটকর্মীরা ভোট গ্রহণ করতে যাবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়৷ শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সদস্য ও মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষা আন্দোলনের নেতা তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘সংবিধানে নাগরিকদের নিরাপত্তার অধিকার স্বীকৃত, নির্বাচন কমিশন ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে ভোটকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মনোবল ভেঙে যাবে৷ ফলে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে৷ নির্বাচন কমিশনের উচিত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোটার ও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে ভোটপর্ব পরিচালনায় অবতীর্ণ হওয়া৷’’
আজ শনিবার কাকদ্বীপে সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দিরে ছিল দ্বিতীয় দফায় প্রশিক্ষণ৷ সেখানে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের কয়েকশো প্রতিনিধি বিক্ষোভ দেখান৷ প্রতিবাদ জানান। কাকদ্বীপ মহকুমা শাসকের কাছে একটি লিখিত স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা৷ মহকুমা শাসক মৌখিকভাবে কথা দিয়েছেন, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন৷ ও গোটা বিষয়টি ওবজারভারদের জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেওয়ার জন্যও আর্জি জানাবেন৷ এদিনের এই কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন রথিন মান্না, তমনশ গুপ্ত, অভিজিৎ মণ্ডল,সনাতন দাস, পান্নালাল দাস, সৌম্য কান্তি জানা, বিকাশকলী মণ্ডল, পুষ্পেন্দু মাইতি৷
অনদিকে, সব বুথে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ও নিরাপত্তার দাবিতে ফের বিক্ষোভ দেখাল ভোটকর্মীদের একাংশ৷ শনিবার সকালে খড়গপুর ভোট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের তরফে সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ ভোট কর্মীর নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়৷ বিক্ষোভে অংশ নেন শ’তিনেক ভোটকর্মী৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যান খড়গপুর মহকুমা শাসক সুদীপ সরকার৷ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে বৈঠকে বসেন তিনি৷
বিক্ষুব্ধ ভোটকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি আশ্বস্ত করে জানান, তাঁর কাছে খবর রয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৯০% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। এমনকি শেষ পর্যায়ে তা ১০০% হতে পারে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে জেলা নেতৃত্ব দীপঙ্কর তেওয়ারি ও প্রতাপ পন্ডা বলেন, মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়, লিখিত প্রতিশ্রুতি পেলেই আমরা আশ্বস্ত হব৷ খড়্গপুর মহকুমার এসডিও সুদীপ সরকার বিক্ষোভ চলাকালীন ডিএমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি যে সংগত তা মেনে নেন মহকুমা শাসক সুদীপ সরকার৷ বলেন, “আপনাদের সংগঠনের নেতৃত্বে রাজ্যে যে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ চলছে, ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়ে তার পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যাপকভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে৷’’ তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা জন্য প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি আমরা যতটা সম্ভব কার্যকরী করব৷’’
এরপর বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে দীপঙ্কর তেওয়ারি ও প্রতাপ পন্ডা সাফ জানিয়ে দেন, “যতদিন না আমরা প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ সুনিশ্চিত নিরাপত্তার লিখিত প্রতিশ্রুতি পাব, ততদিন আমাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলতে থাকবে। আগামী ২৮ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের দপ্তরে আমরা বিশাল প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত করব এই দাবি নিয়ে৷’’