শীঘ্রই কী ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হবে? জল্পনা তুঙ্গে

শীঘ্রই কী ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হবে? জল্পনা তুঙ্গে

নিজস্ব প্রতিনিধি:  নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা কবে পরীক্ষা করা হবে তা নিয়ে বহুদিন ধরেই নানা জল্পনা চলছে। এবার বিশেষ সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে শীঘ্রই সেই কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা হতে পারে জোকার ইএসআই হাসপাতালে। যদিও বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে কেউই মুখ খোলেননি। জানা গিয়েছে ইএসআই হাসপাতালের কার্ডিওলজি, ইএনটি এবং নিউরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ-সহ আরও কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে এই নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

 

আদালতের নির্দেশের পরেও চিকিৎসকদের ছাড়পত্র না মেলায় এখনও পর্যন্ত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি। সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করলেন মানসিক চাপের কারণেই সুজয় কৃষ্ণ কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে পারছেন না। বিশেষ সূত্রে এমনটাই খবর। যদিও  হাসপাতালের এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে ইডি। ইডি মনে করছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কণ্ঠস্বর নেওয়ার প্রক্রিয়াটিতে দেরি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসএসকেএম হাসপাতালের যে মেডিক্যাল বোর্ড সুজয় কৃষ্ণের চিকিৎসা করছে তাঁদের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ইডি আধিকারিকরা। ইডি মনে করছে যেভাবে কণ্ঠস্বরের নমুনা নেওয়া যাচ্ছে না তাতে বিচার প্রক্রিয়াতে কার্যত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজয়ের উপর অসম্ভব মানসিক চাপ রয়েছে বলেই এখনই তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা নেওয়াটা ঠিক হবে না। এতে সুজয়ের মানসিক চাপ আরও বেড়ে যাবে, আর তাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন মানসিক চাপের সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে সিবিআই ও ইডিকে। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করাটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ইডি আধিকারিকদের হাতে এমন একটি অডিও রেকর্ডিং রয়েছে যেখানে সুজয়ের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে। তাই কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে ইডি নিশ্চিত হবে সেটা সুজয়েরই কণ্ঠস্বর কিনা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবুজ সংকেত না  দেওয়ায় ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।

 

বহুদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে টানাপড়েন চলছে। সুজয়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মাসখানেক আগে চিঠিও দিয়েছিল ইডি। ঘটনা হল দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন সুজয়। তাই হাসপাতালের অনুমতি ছাড়া সেই নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।  তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন, কেন এতদিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে, বা আরও কতদিন তাঁকে সেখানে থাকতে হবে, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে হাসপাতাল সুপারের চেম্বারেও গিয়েছিলেন একাধিক ইডি আধিকারিক। আর তার ভিত্তিতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন মানসিক চাপ থাকার কারণেই সুজয়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা এখনই নেওয়া ঠিক হবে না। এরপর এসএসকেএম হাসপাতালের পরিবর্তে ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে সুজয়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে ইডি। সেটা সম্ভব কিনা তা খতিয়ে দেখতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে ইএসআই কর্তৃপক্ষকে, এমনটাই নির্দেশ আদালতের। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের ডিন মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব থাকবেন। ‌এই পরিস্থিতিতে জানা যাচ্ছে শীঘ্রই সেই মেডিকেল বোর্ডের অধীনেই ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করা হবে।

 

প্রশ্ন হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করাটা কেন এত জরুরি? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে যে কলরেকর্ড ইডির হাতে রয়েছে সেখানে রাজ্যের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কথোপকথন  রয়েছে। আর যে বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন এবং সেখানে যে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা সামনে এলে রাজ্য রাজনীতিতে ‘ভূমিকম্প’ হতে পারে। তাই ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করাটা অত্যন্ত জরুরি কাজ বলেই ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন। উল্লেখ্য মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে বিভিন্ন রাজ্যের গোয়েন্দা পুলিশ বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা বহু অপরাধের ঘটনার কিনারা করেছেন। সেই জায়গা থেকে ‘কালীঘাটের কাকু’র ফোন থেকে যে কল রেকর্ড বা বিভিন্ন তথ্য ইডি আধিকারিকরা পেয়েছেন তা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে অনেকেরই মত। তাই সেই কণ্ঠস্বরের নমুনা কবে নেওয়া হয় এখন তারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *