“নবান্ন অভিযান” কৃষকদের ‘দিল্লী চলো’ পার্ট টু! এটাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন?

কলকাতা: কৃষকদের “দিল্লি চলো” মুভমেন্টকে মনে করালো মঙ্গলবারের “নবান্ন অভিযান”। আদৌ কি পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের এই নবান্ন অভিযান শান্তিপূর্ণ ছিল? নবান্ন যেন দুর্গ! আরজি কর…

nabanna avi

কলকাতা: কৃষকদের “দিল্লি চলো” মুভমেন্টকে মনে করালো মঙ্গলবারের “নবান্ন অভিযান”। আদৌ কি পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের এই নবান্ন অভিযান শান্তিপূর্ণ ছিল? নবান্ন যেন দুর্গ! আরজি কর নাড়িয়ে দিলো গোটা বাংলাকে, বুধবার বাংলা বন্ধের ডাক বিজেপির।

২০২০ সালের কৃষক আন্দোলন। কাট টু ২০২৪। নরেন্দ্র মোদি সরকারকে রীতিমত কোণঠাসা হতে হয়েছিল। হাজার হাজার কৃষক পথে নেমে আন্দোলন করেছেন। আর কৃষকদের রুখতে কোথাও কংক্রিটের দেওয়াল, কোথাও কাঁটাতারের বেড়া, পেরেক গাঁথা পাটাতন, বিশাল পুলিশ ফোর্স মোতায়েন। কী করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার? কৃষক আন্দোলন নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল হয়েছিল। সেই ঘটনাকেই আজ মনে করালো বাংলার বুকে “নবান্ন অভিযান”।

আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এটাকে মুখ করেই, নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল মঙ্গলবার। আর সেই অভিযান রুখতে হাজার হাজার পুলিশ রাস্তায় নামালো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। হ্যাঁ জায়গাটা দিল্লি নয় কলকাতা, সরকারটা মোদি নয় মমতা। কিন্তু নবান্ন অভিযান রুখতে এদিন নিজেদের পুরো শক্তি কাজে লাগিয়েছে রাজ্য পুলিশ। বহুস্তরি ও ব্যারিকেডে ঘিরে ফেলা হয় নবান্ন চত্বর। অতি তৎপরতার সাথেই নেওয়া হয় প্রস্তুতি। নামানো হয় ১০ ফুটের বেশি উচ্চতার গার্ডরেল। অ্যালুমিনিয়াম এর ব্যারিকেড পিছন করতে মাখানো হয় গ্রিজ। গার্ডওয়ালের নিচে বালির বস্তা। আনা হয়েছিল কনটেনার। সঙ্গে ক্রেন। আর এত ব্যবস্থা এত পুলিশি তৎপরতা সবকিছু দেখে শুনে দিল্লি চলো মুভমেন্টের স্মৃতিই কার্যত জেগে উঠলো। এখন প্রশ্ন হল, ছাত্র সমাজের এই নবান্ন অভিযানকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছিল পুলিশ। তাহলে কি সত্যিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ফেলার চক্রান্ত ছিল এটা? কারণ প্রতিশ্রুতি রাখেননি আন্দোলনকারীরা। হয়নি কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। দিনভর রীতিমতো ধুমধুমার কান্ড চলল রাজপথ জুড়ে। আন্দোলনকারীদের রুখতে রীতিমতো হিমশিম খেলে পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হলো ইঁট পাটকেল। রক্ত ঝড়লো পুলিশের। পুলিশের বাইকে লাগানো হলো আগুন। পাল্টা পুলিশের লাঠিচার্জ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের সেল চার্জ, লাগাতার জল কামান ব্যবহার পুলিশেরও।

এ দিনের এই নবান্ন অভিযান কার্যত প্রশ্ন তুলে দিল আরজিকর কান্ডে নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি, নাকি সুযোগ বুঝে গদি হাতানোর চেষ্টায় বিরোধীরা? বলাই বাহুল্য এ দিনের মিছিল নিয়ে যথেষ্ট উদগ্রীব ছিল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে মেডিকেল এবং লিগাল হেল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পদ্ম শিবির। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার নবান্ন অভিযানে না হাঁটলেও, দিনভর তারা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ এর দাবী জানানোর পাশাপাশি ফুলফিল সাপোর্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের এই নবান্ন অভিযানকে। যখন আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে তেড়ে গেছে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট পাটকেল ছুড়েছে, ব্যারিকেড এর উপরে জাতীয় পতাকা নিয়ে উঠেছে, ব্যারিকেড ধরে ঝাঁকিয়ে উপড়ে ফেলে দিয়েছে তখনো এটাকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই বলেছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকি ছাত্রসমাজের পাশে দাঁড়াতে বুধবার রাজ্যব্যাপী ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের ডাক দিল বিজেপি। নবান্ন অভিযানে গিয়ে বহু জন আটক হয়েছেন। তাঁদের ছাড়াতে মঙ্গলবার বিকেলেই লালবাজার ঘেরাও অভিযানের ডাক দেয় বিজেপি। মিছিলে ছিলেন সুকান্ত মজুমদার, রুদ্রনীল ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়েরা। তবে লালবাজারের অদূরে বিজেপির মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। অবস্থানে বসে পড়েন সুকান্তেরা।

অন্যদিকে কুণাল ঘোষের চাঁচা ছোলা আক্রমণের ঝাঁঝের মুখে ফের গেরুয়া শিবির। বিজেপির চক্রান্ত ভেস্তে গিয়েছে বলেই ধর্মঘটের ডাক। পাল্টা দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, বুধবার জনজীবন অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক থাকবে। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে যে বাংলা বন্‌‌ধের কথা ঘোষণা করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তাতে ফের বুধবার বাড়ির বাইরে বেরোলে গোলমালের আশঙ্কা থাকছে। এতে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে। কখনো নবান্ন অভিযান কখনো ধর্মঘট জনজীবন স্তব্ধ হচ্ছে। এভাবেই কি নির্যাতিতার সুবিচার হচ্ছে? প্রশ্ন আরজিকর কাণ্ডের প্রতিবাদীদের একাংশের।

দু পাঁচ দিন নয়, সিবিআই এই ঘটনার দায়িত্বভার নিয়েছে। তারপর দীর্ঘদিন পার। সেক্ষেত্রে নতুন কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে কি? বিশেষ কোন অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত চোখে পড়েছে?

কংগ্রেস মিছিল করবে, বিজেপি ধর্নায় বসবে। এর সঙ্গে রাস্তায় নেমে প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরজিকর কাণ্ডে ধর্ষণ খুনের ঘটনায় নির্যাতিতা সুবিচার পাবে তো? দিনশেষে এই প্রশ্নটাই ফিরছে তিলোত্তমার আনাচে কানাচে।