উল্টোরথের এই অজানা কথাগুলি আপনি জানেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক!

উল্টোরথের এই অজানা কথাগুলি আপনি জানেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক!

কলকাতা: আজ উল্টোরথ। যা নিয়ে একই ভাবে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে পুরী। উল্টোরথ উপলক্ষেও পুরীতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হতে শুরু করেছে। বাংলা থেকেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। আসলে বাঙালির অন্যতম আবেগের নাম পুরী। পুরীর রথযাত্রা ঘিরে ওড়িশা ও বাংলার মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। যা ফের দেখা গিয়েছিল রথযাত্রার দিনে। লক্ষ লক্ষ ভক্তের রশির টানে জগন্নাথদেব, সুভদ্রা ও বলরাম পৌঁছে গিয়েছিলেন মাসির বাড়ি।  দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। আজ বুধবার উল্টোরথ। এদিন মূল মন্দির অর্থাৎ ঘরে ফিরবেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই উল্টোরথ ঘিরেও ভক্তদের প্রবল উন্মাদনা দেখা যাবে। তবে এদিন গুণ্ডিচা মন্দির থেকে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম পুরীর মন্দিরে পৌঁছনোর পর প্রথা অনুযায়ী মূল মন্দিরে প্রবেশ করবেন না। রথ-সহ বিগ্রহ তিনটি দিন বাইরেই থাকবে। বেশ কিছু আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্যই এই প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সেই সমস্ত অনুষ্ঠান তিন দিন ধরে চলবে। তারপর মহা সমারোহের সঙ্গে তাঁদের মন্দিরের রত্নবেদিতে তোলা হবে।

বাড়ি ফেরার পর একাদশী তিথিতে তিন বিগ্রহ সেজে উঠবেন সোনার গয়নার সাজে। প্রতি বছর এভাবেই সাজানো হয় তিন দেবতাকে। যাকে বলা হয় ‘সোনাবেশ’। এরপর দ্বাদশীর সন্ধ্যায় শুরু হবে ‘অধরপনা’ উৎসব। রীতি অনুযায়ী প্রভু জগন্নাথদেবকে শরবত খাওয়ানো হবে। আর তৃতীয় দিন অর্থাৎ ত্রয়োদশীতে জগন্নাথদেবের উদ্দেশে ভোগ হিসেবে কয়েকশো হাঁড়ি রসগোল্লা নিবেদন করা হবে। যা ‘রসগোল্লা উৎসব’ নামে পরিচিত। উল্টোরথের পর অন্যতম সেরা আকর্ষণ এই ‘রসগোল্লা উৎসব’। এরপর নীলাদ্রিবিজয় উৎসবের মাধ্যমে তিন দিনের রীতি শেষ হবে। এরপরই তিন বিগ্রহকে মন্দিরের মূল রত্নবেদিতে তোলা হবে। আর উল্টোরথ শুরু হওয়ার আগে মন্দিরের পুরোহিত জগন্নাথদেবের দ্বাররক্ষীদের পুজো করেন। যা দ্বারপাল পুজো নামে পরিচিত।

এখন প্রশ্ন তিনদিন কেন বাইরে রাখা হয় বিগ্রহদের? পুরাণ ও লোকগাথা অনুসারে এই কয়েকটি দিন জগন্নাথদেবের উপর অভিমান করে থাকেন তাঁর স্ত্রী স্বয়ং মা লক্ষ্মীদেবী। কারণ তিন ভাই বোন মাসির বাড়ি গিয়েছেন, কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি লক্ষ্মীদেবীকে। কথিত আছে পুরীর মূল মন্দিরে জগন্নাথদেব ঢুকতে গেলে দেবীলক্ষ্মী দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই লক্ষ্মীদেবীর মান ভাঙাতে জগন্নাথদেব হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লা নিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকেই রসগোল্লা উৎসব-সহ অন্যান্য রীতি পালন হয়ে আসছে উল্টোরথের পর থেকে।

আর সেই সূত্রে পুরীর প্রায় সমস্ত মিষ্টির দোকানেই এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রসগোল্লা তৈরির কাজ। কারিগরদের যেন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। এই সময়ে পুরী তথা ওড়িশাবাসী রসগোল্লায় মজে থাকেন। সবমিলিয়ে মহা ধুমধামের সঙ্গে আজ পুরী তথা দেশজুড়ে পালিত হতে চলেছে উল্টোরথ উৎসব। আর সেই উৎসব ঘিরে রয়েছে এমন কিছু কাহিনি। এভাবেই শেষ হচ্ছে চলতি বছরের রথযাত্রা ও উল্টোরথ পর্ব। আর আগামী বছর রথযাত্রা হবে ৮ জুলাই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 14 =