‘Amrela’ বানান করে চরম ট্রোলিংয়ের শিকার! কেমন আছেন সুদীপ্তা? এবার মুখ খুললেন বাবা

‘Amrela’ বানান করে চরম ট্রোলিংয়ের শিকার! কেমন আছেন সুদীপ্তা? এবার মুখ খুললেন বাবা

কলকাতা:  একটা প্রশ্ন৷ একটা ভিডিয়ো ক্লিপিংস৷ অভিশপ্ত করে তুলেছে তাঁর জীবনকে৷ আজ লোকচক্ষুর আড়ালে মুখ লুকিয়ে বেরাতে হচ্ছে ‘Amrela’ বানান করা উচ্চমাধ্যমিকের সেই পরীক্ষার্থীকে। পাড়া, প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়-পরিজন, সকলের বিদ্রুপের মুখে পড়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু, পরিবারের সদস্যদের তৎপরতায় বড়সড় বিপদ ঘটেনি৷ কিন্তু ভালো নেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া ‘আমব্রেলা দিদি’৷ তাঁর পরিবারের আর্তি, ‘আমাদের মেয়েকে বাঁচতে দিন৷’ নদিয়ার একটি স্কুলের ওই ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে মতুয়া মহাসঙ্ঘ৷  
 

আরও পড়ুন- রাজ্যপাল সই না করলে শিশুসুলভ আচরণ হবে, আচার্য বিল নিয়ে কটাক্ষ চন্দ্রিমার

উচ্চমাধ্যমিকে ইংরাজিতে অকৃতকার্য হয়ে স্কুলের সামনেই রাস্তার উপরয় বিক্ষোভে বসেছিলেন কিছু ছাত্রী৷ তাঁদেরই একজন সুদীপ্তা৷ তিনি ছিলেন আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারিতে৷ বিক্ষোভের খবর করতে আসা এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন কেন বিক্ষোভ করছেন তাঁরা? জবাবে সুদীপ্তা বলেছিলেন,‘‘আমরা সব বিষয়ে পাশ করেছি৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেটার পেয়েছি৷ অথচ আমাদের ইংরাজিতে ফেল করানো হয়েছে৷’’ এর পরেই তাঁর কাছে  ‘Umbrella’ বানান জানতে চান ওই সাংবাদিক৷ প্রথম এড়িয়ে যাওয়া চেষ্টাও করেন সুদীপ্তা৷ বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কে রে, কী বলছেন, এসব নিতে এসেছেন”৷ এর পর বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়ে সুদীপ্তা বলেন,  ‘Amrela’৷ এই ভিডিয়ো ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে যায়৷ শুরু হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-ঠাট্টা৷ তাঁকে নিয়ে একেবারে ট্রোলের বন্যা বইতে থাকে৷ এমনকী কেউ কেউ আবার তাঁকে নিয়ে রিমিক্স গানও বানাতে শুরু করেছেন৷ এর প্রতিবাদে সরব হয়েছিল বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ৷ 

সুদীপ্তার পাশে দাঁড়িয়ে বুদ্ধিজীবীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, একটি বানানে কি কোনও পড়ুয়ার মেধা যাচাই করা সম্ভব? কেউ কেউ আবার এর জন্য দায়ী করেছিলেন আমাদের এডুকেশন সিস্টেমকে৷ সুদীপ্তাকে নিয়ে যখন উদ্বিগ্ন বিশিষ্টজনেদের একাংশ, তখন তাঁর বাবা সুকুমার বিশ্বাস জানালেন, ‘‘সুদীপ্তা ভালো নেই৷’’ এদিন সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘ওঁকে নিয়ে যে ট্রোল হচ্ছে, তার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সুদীপ্তার জীবনে৷ ইতিমধ্যে দু’বার আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছে ও৷ পরিবারের সকলে সতর্ক থাকায় বিপদ ঠেকানো গিয়েছে৷’’  তিনি আরও জানান, রাস্তায় বেরনোটাই মুশকিল হয়ে উঠছে৷ এমন এমন বিশ্রী মন্তব্য শুনতে হচ্ছে যা সহ্য করা যায় না৷ আত্মীয় প্রতিবেশীরা খারাপ মন্তব্য করছে। বলছে পড়াশোনা শেখাতে পারেননি। আমি  ইউটিউবে ওই ভিডিয়োটা দেখেছি। ওকে বলেছে ‘আমরেলা’ বানান করতে। তাই ওই বানান করেছে। ওকে যদি বলত ‘আমব্রেলা’ বানান করতে তাহলে হয়তো ঠিক বানান বলত।’’ 

নদিয়া জেলার মতুয়া মহাসঙ্ঘের সম্পাদক জয় মিত্র বলেন, ‘‘সুদীপ্তা আমাদের মেয়ের মতো৷ ওঁর সামনে পুরো ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে৷ তাছাড়া ওঁর কাছে সেদিন ‘আমরেলা’ বানান জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘আমব্রেলা’ নয়৷ তাই ও আমরেলা বানানই বলেছে৷ তাছাড়া ওঁকে নিয়ে যে ভাবে ট্রোল হচ্ছে, যে ভাবে ওঁর ছবি ফেসবুক থেকে নিয়ে ভিডিয়ো বানানো হচ্ছে, তাতে বেঁচে থাকাটাই ওঁর কাছে দুর্বিসহ যন্ত্রণার৷ ইতিমধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল ও৷ ওঁর শারীরিক অবস্থা একেবারেই স্থিতিশীল নয়৷ ও বাঁচবে কিনা আমরা জানি না৷ আর এর জন্য দায়ী আমাদের সমাজ৷ কিছু অসুস্থ মানুষ যে ভাবে ওকে নিয়ে ট্রোল করছে, তার জন্যই এই পরিস্থিতি৷ তবে ওঁর পাশে থাকবে মতুয়া মহাসঙ্ঘ৷’’  এর বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই তাঁরা সাইবার ক্রাইমে যাবেন বলেও জানান জয়৷ তাঁর আবেদন, ‘‘ও ভুল করে থাকলে ক্ষমতা করুন৷ ওঁকে নিয়ে ট্রোল করবেন না৷ ওঁকে বাঁচতে দিন৷’’