বালুরঘাট:মানুষ তো অপত্য স্নেহে কত কী করে। অপত্য স্নেহে বাড়িতে পোষ মানে টিয়া, ময়না, চন্দনা থেকে কাকাতুয়া কিংবা নানা দেশী বিদেশী পাখি। কিন্তু শুনেছেন কী কখনও পরিযায়ী পাখি পোষ মেনেছে মানুষের সাহচর্যে?তেমনই অবাক কাণ্ড ঘটিয়েছেন বালুরঘাটের দিপালীনগরের বাসিন্দা উজ্জ্বলা দাস। বাড়ির পিছনের হাঁসের ডাক শুনে স্বামীকে নিয়ে দেখতে যান উজ্জ্বলাদেবী।
দেখতে পান সাদা কালো ডোরাকাটা দাগের হাঁসের মত দেখতেই কিছু পাখির ছানা। কিন্ত এটা তো হাঁস নয়। পরে জানা যায় যে এটা পরিযায়ী পাখি লেসার হুইসলিং ডাক বা সরালের ছানা। তারপর থেকেই এদের সন্তান স্নেহে যত্ন করছেন উজ্জ্বলা। নিয়ম করে সকালে ছাদে একটু ছেড়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই থাকেন যাতে কাক বিরক্ত করতে বা ধরতে না পারে। সকালেই মুড়ি নরম করে মেখে ছোট্টগুলোকে খেতে দেন উজ্জ্বলা। আবার পরের দিকে একটু ভাত চটকে দেন, খিদেও তো পায় ওদের।
তবে আশ্চর্য বিষয়, শুধু বাচ্চা পাখি নয় উজ্জ্বলার ছাদে রোজই আনাগোনা লেগে থাকে এই বাচ্চাদের মা বাবাদেরও।তাদের ডাকে- ছানারা সাড়াও দেয়। তারপর ছাদেই একটু ছানা দের নিয়ে ঘোরে ওরা। মা বাবা নিজেদের খাবারের খোঁজে চলে গেলে শুরু হয় ছোটদের খাবার পর্ব। উজ্জলা জানিয়েছেন, বাচ্চাগুলির ওপর মায়া পড়ে গেছে তাঁর।
এদিকে ছবির উল্টোদিকটাও রয়েছে। এই খবর জানতে পেরে অনেকে গুলতি বা লাঠি নিয়ে পাখি মারতে আসে। কিন্ত উজ্জ্বলা তাদের থামান। প্রয়োজনে কড়া কথা শোনান। এই কাজে স্বামী চম্পক দাসও তাঁকে সবসময় সাহায্য করেন। তিনি আরও জানান তাঁকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিশারী সঙ্কল্প।
এ প্রসঙ্গে দিশারী সংকল্পের সম্পাদক তুহিনশুভ্র মন্ডল জানান, সংস্থার সদস্য সত্যজিত মজুমদার বিষয়টা প্রথমে তাদের জানান। পাখিগুলি বালিহাঁস নয় লেসার হুইসলিং ডাক বা ছোট সরালের ছানা। তাঁর মতে এই ঘটনা অভূতপূর্ব। মানুষ পরিযায়ী পাখিদের ছানাদের সন্তান স্নেহে বড় করছে এমন ঘটনা শোনা যায় না। বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগের সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পরিযায়ীদের পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কিন্তু আগে থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার নাম ছিল। জেলার বালুরঘাট থানার মালঞ্চা গ্রামে শীতকালে ভিড় জমায় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। যদিও গত শীতে সেভাবে তাদের লক্ষ্য করা যায়নি। এই পাখি গুলোকে মুলত যত্ন করে থাকেন আঙিনা বার্ডস এন্ড এনভায়রনমেন্টস নামের সংগঠন। মালঞ্চা ছাড়া আঙিনা গ্রামেও পরিযায়ী পাখির সমাগম হয় বলে জানা যায়।