নয়াদিল্লি: করোনা চিকিৎসার পথে ভারতের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা এখন টেস্টিং কিট৷ সারা দেশেই যে কিটের অভাব রয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে প্রশাসনও৷ এবার সেই সমস্যা সমাধানের পথ দেখালেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী৷ বিদেশী কিটের অভাব মেটাতে দেশীয় প্রযুক্তিতে করোনা টেস্টিং কিট বানিয়ে ফেললেন তাঁরা৷
এতদিন ভারতের হাতে সম্বল বলতে ছিল শুধুই বিদেশ থেকে আসা কিট৷ যা কখনোই পর্যাপ্ত নয়৷ ফলে যথেষ্ট পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসা মহলে৷ এই কিটে করোনা টেস্ট যথেষ্ট খরচাসাপেক্ষও৷ তবে দুই বাঙালী বিজ্ঞানীর আবিষ্কার নতুন দিশা দেখাতে চলেছে ভারতকে৷ এই কিটের সাহায্যে পরীক্ষার খরচও পড়বে অনেক কম৷ দেশীয় এই প্রযুক্তির পুরো নাম বেশ কঠিন (FnCas9 Editor Linked Uniform Detection Assay)৷ তবে এর সংক্ষিপ্ত নাম আপামর বাঙালির অত্যন্ত পরিচিত, ‘ফেলুদা’ (FELUDA)৷
বিদেশি কিটের উপর ভরসা কামাতেই দেশীয় কিট তৈরি করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ ইনস্টটিউট অফ জেনোমিক্স এবং ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানী সৌভিক মাইতি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী৷ তাঁদের আবিষ্কৃত কিট যেমন সময় বাঁচাবে, তেমনই বাঁচবে অর্থ৷ বিদেশী কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে খরচ পড়ে ৪,৫০০ টাকা ও পরীক্ষার ফল পেতে সময় লেগে যায় পুরো একটা দিন৷ কিন্তু ফেলুদা’র মাধ্যমে পরীক্ষা করলে খরচ হবে মাত্র ৫০০ টাকা৷ ফল জানা যাবে এক ঘণ্টার মধ্যেই৷ সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আসবে এই দেশীয় কিট৷ ফলে আরও ব্যাপক ভাবে করোনা পরীক্ষা সম্ভব হবে ভারতে৷
ফেলুদা প্রসঙ্গে দুই বিজ্ঞানী মাইতি এবং চক্রবর্তী বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আরএনএ থাকে৷ প্রথমে সেই আরএনএ-কে ডিএনএ-তে পরিবর্তন করা হয়৷ তারপর পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন চেন (পিসিআর) মেশিনের সাহায্যে একটি ডিএনএ থেকে তার অসংখ্য কপি (ডিএনএ) তৈরি করা হয়৷ পরবর্তী ধাপে এর এর সঙ্গে ক্রিসপার ক্যাস-৯ বলে ব্যাকটেরিয়া প্রোটিনের লিঙ্ক করানো হয়৷ যা ভাইরাল ডিএনএ-কে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে৷ তারপর নমুনা কাগজের স্ট্রিপে ফেলা হয়৷ নমুনা ফেলার পরই স্ট্রিপে একটি লাইন ফুটে ওঠে৷ এই লাইন ফুটে উঠলেই বোঝা যাবে কিটটি সঠিকভাবে কাজ করছে৷ ওই স্ট্রিপে দ্বিতীয় লাইন ফুটে উঠলেই বুঝতে হবে করোনা পজেটিভ৷ স্ট্রিপে দ্বিতীয় লাইন ফুটে না উঠলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস নেই৷
বিদেশি কিটের জন্য যে পিসিআর লাগে তা আকারে অনেক বড় এবং দামি৷ সেই তুলায় দেশীয় পিসিআর মেশিন আকারেও ছোট, দামও কম৷ পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় পিসিআর-এর ব্যবহার চলছে৷ দেবজ্যোতি জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক৷ তাঁরা আশাবদী, এক সপ্তাহের মধ্যেই এই কিট বাজারে চলে আসবে৷