ভোট হিংসা নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র নিশানা শুভাপ্রসন্নর! এবার কী নতুন করে বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্ব দেবেন তিনি?

ভোট হিংসা নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র নিশানা শুভাপ্রসন্নর! এবার কী নতুন করে বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্ব দেবেন তিনি?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ঘটনার পর রাজপথে যেভাবে নেমেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা, সেই দিন কি আবার ফিরে আসতে চলেছে? প্রবীণ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের বক্তব্যে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। যেভাবে তিনি পঞ্চায়েতে ভোট হিংসা নিয়ে সরব হয়েছেন তাতে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোট হিংসার ঘটনায় তিনি লজ্জিত বলে দাবি করেছেন শিল্পী। উল্লেখ্য সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম  কাণ্ডের পর রাজপথে নেমে যে সমস্ত বুদ্ধিজীবী প্রতিবাদে সরব হয়ে রাজ্যে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। সেই শুভাপ্রসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার ঘটনায় নতুন করে পথে নামার ডাক দিলেন। শিল্পী বলেছেন, “সময় এসেছে, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী মানুষ জোট বেঁধে পথে নামুক, এই আহ্বান করতে পারি। আমার বিশ্বাস হাজার হাজার মানুষ তাতে যোগ দেবেন। আমরা আবার মিছিল করতে পারি। যে মিছিল আমরা করেছিলাম, সংস্কৃতি বদলের মিছিল”। এভাবেই ভোট হিংসার ঘটনায় ফের রাস্তায় নামার ডাক দিলেন তিনি।  

পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পর্ব শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত ঝরতে শুরু করেছিল জেলায় জেলায়। এরপর নির্বাচনের দিনেও রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। মৃত্যু হয় বহু মানুষের। যে ঘটনায় সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। যদিও সোমবার বিকেল পর্যন্ত পঞ্চায়েতে হিংসা নিয়ে শুভাপ্রসন্ন ছাড়া মুখ খোলেননি আর কোনও বুদ্ধিজীবী। আর শিল্পী আরও বলেন, “যে ভোট গণতন্ত্রের উৎসব, সেখানে এত মানুষের প্রাণ চলে গেল। এই সংস্কৃতির বদল হচ্ছে না। এখানে যা হয় সারা দেশে কোথাও হয় না। এত প্রাণ কেন যাবে? রামমোহন, বিদ্যাসাগর, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, তাঁরা সারা পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছেন। সেখানে এই সংস্কৃতি আমরা চাই না।” এখানেই থেমে থাকেননি শিল্পী। ফের পরিবর্তনের ডাকও দিয়েছেন তিনি। শুভাপ্রসন্ন বলেন, “লজ্জা করে! যে গর্বের মানুষরা পথ দেখিয়েছেন সেই পরম্পরার প্রতিনিধি ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে। ভারতের কোথাও এটা হয় না। এর (ভোটে হিংসা) পরিবর্তন চাই, পরিবর্তন করতে হবে। এত প্রাণ কেন যাবে, এটা মনীষীদের পীঠস্থান। নেতাজি রবীন্দ্রনাথের বাংলায় এসব হবে? কোনও সুস্থ শিক্ষিত মানুষ এই বাংলা দেখতে চান না।”

উল্লেখ্য ভাষা দিবসের দিন দেশপ্রিয় পার্কের একটি অনুষ্ঠানে শুভাপ্রসন্নের একটি মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন শিল্পী। এরপর বিষয়টি মিটে গেলেও বোঝা যায় শিল্পীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অথচ বাম আমলের শেষ দিক থেকেই শুভাপ্রসন্ন তৃণমূলপন্থী বলেই পরিচিত হয়ে এসেছেন। ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিশেষ কমিটিতেও রেখেছিলেন। সেই সময় একাধিকবার শিল্পীকে বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁরাই (বুদ্ধিজীবীরা) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় এনেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভোট হিংসা নিয়ে শুভাপ্রসন্ন যে মন্তব্য করলেন তাতে নিঃসন্দেহে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ল। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল, এবার কী তবে বুদ্ধিজীবীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করবেন? তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ বহু আগেই উঠেছে। এর মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে হিংসা কেড়ে দিয়েছে চল্লিশটির বেশি তাজা প্রাণ। আর সেই বিষয়টি নিয়ে যেভাবে সরব হয়েছেন প্রবীণ চিত্রশিল্পী, তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর শুভাপ্রসন্নের সুরে সুর মিলিয়ে আরও কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *