নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সমাবেশে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। যে ঘটনায় আলোড়ন পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেই দল ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর ধারাবাহিকভাবে তৃণমূলকে নিশানা করে চলেছেন তিনি। আর নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীকে হারানোর পর শুভেন্দু আরও আক্রমণাত্মক মেজাজে তৃণমূলকে তোপ দাগতে শুরু করেন।
এই দু’বছর সময় ধরে শুভেন্দু তৃণমূল সম্পর্কে বহু কথা বললেও হঠাৎই পঞ্চায়েত ভোটের দোরগোড়ায় নতুন দাবি করেছেন তিনি। শুভেন্দুর দাবি দলে ধরে রাখতে তৃণমূল সেই সময় উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ পর্যন্ত তাঁকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আটকানো যায়নি তাঁকে। তিনি তৃণমূলের দুর্বিষহ পরিবেশে থাকতে পারছিলেন না বলেই দল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। বুধবার পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় একটি প্রচার সভায় এমনটাই বলেছেন শুভেন্দু। যদিও তৃণমূল শুভেন্দুর দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। এদিন শুভেন্দু বলেন,”তৃণমূল আমার কোনও পদ কাড়েনি। মন্ত্রিত্ব, চেয়ারম্যান পদ সব ছিল। কিন্তু আমি সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এসেছি। বাংলাকে বাঁচাতে হবে বলে। ২০২০ সালে আমাকে উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের অফারও দিয়েছিল। কিন্তু আমি সব ছুঁড়ে দিয়ে চলে এসেছি”। এভাবেই শুভেন্দু বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁকে পদের লোভ দেখিয়ে আটকে রাখতে চেয়েছিল তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের দাবি এ সমস্তই মিথ্যা কথা।
কিন্তু প্রশ্ন নির্বাচনের ঠিক আগে এমন দাবি কেন করলেন শুভেন্দু? রাজনৈতিক মহল মনে করছে দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে বিশেষ বার্তা দিতেই শুভেন্দু এমন দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে শুভেন্দুকেই যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তা স্পষ্ট। সেই জায়গা থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের এমন বার্তা দিয়ে শুভেন্দু বোঝানোর চেষ্টা করলেন তাঁর আত্মত্যাগ অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। অর্থাৎ লিডারশিপের প্রশ্নে শুভেন্দু রাজ্য বিজেপির দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে আরও পিছিয়ে দিতে চাইছেন বলেই এমন দাবি করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনা হল শুভেন্দুর মতো সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন নেতা রাজ্যে বেশি নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ব্যক্তি শুভেন্দুর একটি নিজস্ব সংগঠন আছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়েছেন তিনি। সেই ‘জায়ান্ট কিলার’ যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পাবেন এটা প্রত্যাশিতই ছিল। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। আর সেই অবস্থান আরও মজবুত করতেই শুভেন্দু উপমুখ্যমন্ত্রী পদের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর গুরুত্ব বাড়াতে চাইছেন বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। যদিও রাজনৈতিক মহল মনে করে শুভেন্দু যে দাবি করেছেন তার সত্যতা থাকতেও পারে। আবার ভিন্ন মতও আছে। সব মিলিয়ে শুভেন্দুর নয়া দাবি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যে চর্চা চলবে এটাই স্বাভাবিক।