হরিশ্চন্দ্রপুর: শনিবার গভীর রাতে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার কাপাই চন্ডী গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের কাছে কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের শাসক দলের প্রধানের স্বামীর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালাল কিছু দুষ্কৃতী। যদিও এই ঘটনায় প্রধানের স্বামী আহত হলেও অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তবে এলাকাবাসীদের তারা খেয়ে আক্রমণকারীরা মোটর সাইকেলে চেপে চম্পট দেয়। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও এলাকার এক পক্ষের অভিযোগ, কল বসানো নিয়ে প্রধানের স্বামী ১০ হাজার টাকা কাটমানি চাওয়াতেই এই হামলা হয়েছে৷ অন্যদিকে প্রধানের স্বামী আব্দুর রশিদের অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে৷ পাল্টা কাটমানি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা কটাক্ষ কংগ্রেসের। এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগমারা গ্রামের পঞ্চায়েত মেম্বার আখতারী খাতুন বর্তমানে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। কিছুদিন আগে ওই গ্রামের এক তৃণমূল কর্মী সঞ্জুর আলি নামে বাসিন্দার সঙ্গে বচসা হয় প্রধানের স্বামীর সঙ্গে। সেখানেই তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই শনিবার গভীর রাতে প্রধানের উপর প্রাণঘাতী হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার সঙ্গে এদের যোগ থাকার সূত্র দেখতে পাচ্ছে অনেকে। যদিও সঞ্জুর আলি নামক ওই বাসিন্দার পরিবারের দাবি, তারা এ ঘটনার সঙ্গে কোনওমতেই যুক্ত না। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে তারা একটি নলকূপ পান৷ তাদের বাড়িতে বসানোর জন্য। কিন্তু ওই নলকূপ বসাতে গেলে প্রধান ও তার স্বামী ১০ হাজার টাকা কাটমানি দাবি করে বসে। কিন্তু সঞ্জুর আলির পরিবার ওই টাকা দিতে নারাজ। এই নিয়ে খানিকটা গণ্ডগোল হয়েছিল।
এদিকে আহত প্রধানের স্বামী আব্দুর রশিদ জানান, শনিবার তিনি থানা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন৷ কপাই চন্ডী বাসস্ট্যান্ডের কাছে তার উপরে চারজন মোটরসাইকেল আরোহী মুখ ঢাকা অবস্থায় এসে বাঁশ দিয়ে হামলা করে। তিনি কোনক্রমে প্রাণে বাঁচিয়ে এলাকায় আশ্রয় নেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা পালিয়ে যায়। আব্দুরের দাবি, ‘‘কয়েকদিন আগে আমার গ্রাম এলাকায় একটি বাড়িতে পঞ্চায়েত সমিতির দেওয়া টিউবওয়েল বসানোর নিয়ে আমি প্রতিবাদ জানাই। সেখানেই সঞ্জুর আলি দলবল নিয়ে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তার জেরেই রাত্রে বেলা আমাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে তারা। ওরা কংগ্রেসের সমর্থক।’’ যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন সঞ্জুর আলির মা নূরসেবা বেবা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে একটি কল পেয়েছিলাম। সেটাই যখন লাগাতে চাই তখন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী এসে ১০ হাজার টাকা কাটমানি দাবি করে। না দিলে কল লাগাতে বাধা দেয়। এবং পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।’’
কংগ্রেসের নেতা আবদুস শোভান কটাক্ষের সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘ওদের নিজেদের দলের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এর ফলেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখানে আমাদের কোনও কর্মী জড়িত নয়। ওরা নিজেরাই কাটমানি দ্বন্দ্বে জর্জরিত। নিজেরাই কাটমানি নিয়ে লড়াই করছে। আর এরই প্রতিফলন হয়েছে শনিবার রাতের ঘটনা।’’ যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লক সভাপতি মানিক দাস জানান, ‘‘সঞ্জুর আলি তৃণমূলের সদস্য ছিল। সে সময় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ওর নামে একটা নলকূপ বরাদ্দ হয়। এখন বর্তমানে ওর সঙ্গে স্থানীয় প্রধানের কিছু মনোমালিন্য হয়েছে। তার জন্যই হয়তো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। দল সমস্ত দিক খতিয়ে দেখবে।’’