কলকাতা: ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পথ চলা শুরু হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। আর জন্মলগ্ন থেকেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে থাকতে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল্য চোখধাঁধানো সাফল্য পায়। এক বছরের মধ্যে দুটি লোকসভা ভোট হয়েছিল। আর লোকসভায় ফলের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় চলে এসেছিল তৃণমূল। তৃণমূলের উত্থানে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে যায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।
অন্যদিকে নীতিশ কুমার, জর্জ ফার্নান্ডেজরা তৈরি করেন সমতা পার্টি। যা পরে নীতিশের নেতৃত্বে হয় জেডিইউ। এত কথা বলার একটাই কারণ জন্মলগ্ন থেকেই এই দুটি দলের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তারা এনডিএ জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বারবার তাঁরা বিজেপি জোট ছেড়ে কংগ্রেসে গিয়েছেন, বা কংগ্রেসকে ছেড়ে বিজেপি জোটে এসেছেন। অর্থাৎ তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে যেভাবে বিরোধী জোটে তৃণমূল এবং জেডিইউ রয়েছে তাতে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এই দুটি দলের একই অঙ্গে যে কত রূপ রয়েছে তা বহুবার স্পষ্ট হয়েছে।
বিজেপি জোটে দীর্ঘদিন থাকার পর একটা সময় সেখান থেকে সরে এসে কংগ্রেস এবং আরজেডি’র সমর্থনে বিহারে সরকার গড়েন নীতিশ কুমার। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ফের আবার বিজেপির হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী হন। সেটিও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আবারও কংগ্রেস এবং আরজেডির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন নীতিশ। নীতিশ যে কতবার ডিগবাজি খেয়েছেন তা গুণতে গেলে ক্যালকুলেটর লাগবে।
অন্যদিকে বিজেপির সঙ্গে জোট করে পরপর দুটি লোকসভায় ভাল ফল করার পর পশ্চিমবঙ্গে ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ থেকে বেরিয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট করেন কংগ্রেসের সঙ্গে। কফিন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জোট থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের সেই বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমকে উৎখাত করতে মমতা স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘হয় এবার নয় নেভার’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তিনি। সেই নির্বাচনের বছর খানেক পর আবার বিজেপি জোটে ফিরে গিয়েছিলেন মমতা। ২০০৯ সালে আবার বিজেপি জোট ছেড়ে বেরিয়ে কংগ্রেসের হাত ধরেন মমতা।
কংগ্রেসের সঙ্গে সেই জোট ধরে রেখে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসেন মমতা। কিন্তু এর বছর খানেক পরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। সেই থেকে তৃণমূল বাংলায় একলাই চলছে। অর্থাৎ তৃণমূল এবং জেডিইউয়ের যাত্রাপথের দিকে নজর রাখলে এটা স্পষ্ট হবে বারবার তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কীভাবে প্রশ্ন উঠেছে। তাই এখন যেভাবে তাঁরা বিজেপিকে হটাতে মহাজোটের হয়ে সওয়াল করছেন, সেটা আগামী দিনে কতটা মসৃণ ভাবে চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। হিমাচল প্রদেশের সিমলায় ফের বিরোধী জোটের বৈঠক হবে। তাই আগামী দিনে এই জোট কতটা মসৃণ ভাবে চলতে পারে সেটাই দেখার।