বহরমপুর: সংসার চালাতে হাতা-খুন্তি ছেড়ে টোটোর স্টিয়ারিং ধরলেন বহরমপুরের রাধারানি দাস৷ কঠিন সময়ে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সেটাই প্রমাণ করে দিলেন তিনি৷
লকডাউনের আগে বাড়ি বাড়ি রাঁধুনির কাজ করতেন বছর ৩৬ এর রাধারানি৷ কিন্তু লকডাউনের কোপে কাজ হারাতে হয় তাঁকে৷ বন্ধ হয়ে যায় স্বামীর রোজগারও৷ কিন্তু পেট তো বাঁচাতে হবে৷ তাই স্বামীর টোটো নিয়ে নিজেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন রাধারানী৷ মহিলা বলে পুলিশও তেমন বাধা দেয়নি তাঁকে৷
প্রথমে তেমন যাত্রী না হলেও, এখন বেশি ভালোই যাত্রী হচ্ছে৷ উপার্জনও মন্দ হচ্ছে না৷ রাধারানি জানালেন, আগে লোকের বাড়ি কাজ করে ৫ হাজার টাকা রোজগার হত৷ এখন মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা হাতে আসে৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদিন টোটো নিয়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেরান রাধারানি৷ সেই সঙ্গে অনুপ্রেরণার এক বার্তা দিয়ে যান শহরের মানুষের মধ্যে৷
রাধারানির বাড়ি বহরমপুরের কান্তনগরে৷ কেন এই পেশায় এলেন তিনি? জবাবে রাধারানি বলেন, লকডাউনে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম৷ অভাব-অনটন বাড়ছিল৷ কী ভাবে সংসার চালাব তা ভেবেই কুল কিনারা করতে পারছিলাম না৷ সেই সময় এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টোটো চালানোটা শিখে ফেলি৷ এর পরই সাহস করে বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়৷
কলকাতায় মহিলা চালক বা বাস কনডাক্টরের দেখা হামেশাই মেলে৷ কিন্তু শহর কলকাতা থেকে বহু দূরে মুর্শিদাবাদে এই চল একেবারে নেই বললেই চলে৷ ফলে রাধারানিকে দেখে তাই অনেকেই প্রশ্ন করেন, হঠাৎ এই পেশাকে কেন বেছে নিলেন তিনি? রাধারানি বলেন, মেয়ারা কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন৷ আর টোটো চালাতে খুব একটা পরিশ্রম হয় না৷ শুধু একটু সাহস থাকলেই হল৷ লকডাইনে সংসার একেবারেই চলছিল না৷ তাই বাধ্য হয়ে এই পেশায় আসি৷ প্রথমে কিছুটা ভয় লাগত৷ কিন্তু এখন আর কোনও সমস্যা হয় না৷ এমনকী অনেক দূরের যাত্রীও এখন তিনি নিয়ে যান অনায়াসে৷