বিবস্বান বসু: ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার পর বেশ অনেক দিনই গড়িয়ে গিয়েছে৷ প্রথম দফার ভোটের দিনও খুব বেশি দূরে নয়৷ অথচ নবান্ন দখলের যুদ্ধে অবতীর্ণ দুই শক্তির তরফে এখনও দেখা নেই ইস্তেহারের৷ প্রচার যখন প্রায় পুরোদমেই শুরু হয়ে গিয়েছে, তখনও ইস্তেহারকে লক্ষ্য করে বলতে হচ্ছে ‘তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’৷
সংযুক্ত মোর্চার যোথ্য ঘোষণা এখনও সামনে না এলেও, গত বৃহস্পতিবারই ইস্তেহার প্রকাশ করে রুটিরুজির দাবি তুলে ধরেছে বামেরা৷ কিন্তু অদ্ভুতভাবে ভোট বাজারে অনুপস্থিত তৃণমূল-বিজেপির ইস্তেহার৷ পাহাড়ের তিনটি আসন বাদ দিয়ে বাকি ২৯১ আসনের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশ করে ফেলেছে তৃণমূল৷ এব্যাপারে তারা বিরোধীদের টেক্কা দিলেও, ইস্তেহার প্রকাশের দিন ক্রমশ পিছিয়েই যাচ্ছে৷
প্রথমে ঠিক ছিল, গত বৃহস্পতিবার শিবরাত্রির দিন ইস্তেহার প্রকাশ করবে তারা৷ কিন্তু নন্দীগ্রামে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি হতে হওয়ায় সে যাত্রা পিছিয়ে যায় তাদের ইস্তেহার প্রকাশ৷ পরবর্তীতে স্থির হয়, ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম দিবসের দিন তৃণমূলনেত্রী জনগণের সামনে তুলে ধরবেন তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা৷ বাস্তবে অবশ্য তার পরও ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও, দিনের আলো দেখেনি তৃণমূলের বঙ্গযুদ্ধের ইস্তেহার৷
বিজেপি তো আবার এখনও পুরো প্রার্থী তালিকাই মেলে ধরতে পারেনি৷ প্রথম চার দফার ভোটের পদ্মযোদ্ধাদের যে নামের তালিকা তারা সামনে এনেছে, তাও পূর্ণাঙ্গ নয়৷ আর ইস্তেহার যে কবে প্রকাশ হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও বার্তা নেই৷ দানা বাঁধছে শুধুই সম্ভাবনার তত্ত্ব৷
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ভোট যখন প্রায় শিয়রে তখনও যদি ইস্তেহারের দেখা না মেলে, তাহলে জনগণেশের সামনে আগামীর কী ছবি তুলে ধরবেন যুযুধান শিবিরের প্রার্থীরা? তৃণমূল তাদের উন্নয়নের পরিসংখ্যান আর নরেন্দ্র মোদি সরকারের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরে ভোট বৈতরণি পার হতে চাইলেও, শুধুই বাক্যবাণে ভরসা না করে দু’ মলাটে ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরে জনতার দরবারে হাজির হলে কি ভালো করত না তৃণমূল? উলটোদিকে বিজেপি আবার যেখানে রামমন্দির নির্মাণ থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ—ঘোষিত ইস্তেহার মেনেই তাদের কর্মসূচি রূপায়ন করে, সেখানে তাদের সোনার বাংলা গড়ার ঢক্কানিনাদ খাতায় কলমে হাজির করেই লড়াইয়ে নামতে পারতেন না মুরলীধর সেন লেনর কর্তারা? মোটের ওপর যা দাঁড়াচ্ছে, তৃণমূল-বিজেপির খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে বিনা ইস্তেহারেই৷ খেলা শেষ হওয়ার ছবিটা কেমন দাঁড়ায়, তা বলবে শুধু সময়ই।