বোলপুর: বিশ্বভারতী কাণ্ডে নয়া তথ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকের গৃহীত সিদ্ধান্তকে বিকৃত করার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ প্রাক্তন উপাচার্য সহ তিন আধিকারিককে বরখাস্ত করল। এরা হলেন বিশ্বভারতী প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন, কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায় ও তৎকালীন বৃত্ত আধিকারিক শমিত রায়। অভিযুক্তদের বক্তব্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বেআইনিভাবে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার ন্যায়বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন এই তিন জন।
এই তিন আধিকারিকক কর্মসমিতি সিদ্ধান্ত বিকৃত করার অভিযোগে আগেই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হন। এই নিয়েই শুক্রবার রাতে জরুরি ভিত্তিতে কর্মসমিতির বৈঠক ডাকেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শান্তিনিকেতনের রথীন্দ্র অতিথি নিবাসে হয় বৈঠক। রাত দশটা পর্যন্ত বৈঠক চলার পর তিন আধিকারিককে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে কর্মসমিতির তরফে সবুজ সংকেত মিলতেই শুক্রবার রাত দশটার পর বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে তাঁদের তিন জনকে ইমেল করা হয়। সেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, বৈঠকে তাঁদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতীর অভিযোগ, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কর্মসমিতির বৈঠকের রেজলিউশন পরিবর্তন করা হয়েছিল। তখন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রককে ভুল তথ্য দিয়ে উপাচার্য পদে মেয়াদ বৃদ্ধি করে নেওয়া হয়। তিন আধিকারিককে বিরুদ্ধে ওঠে এই অভিযোগ। এরপর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দায়িত্বভার গ্রহণের পরেই কর্মসমিতির বেশিরভাগ সদস্য এই নিয়ে সোচ্চার হন। উপাচার্যের নির্দেশে কর্মসমিতি সদস্য দুলাল চন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির রিপোর্টে গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় ১২ জুন সাসপেন্ড করা হয় অভিযুক্ত তিন জনকে। এরপর প্রাক্তন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ আগস্ট রিপোর্ট পেশ করেন।
এদিকে আগামী ৩১ আগস্ট প্রাক্তন উপাচার্য ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপিকা সবুজকলি সেনের অবসর গ্রহণের দিন। তার আগে তাঁকে বরখাস্ত হওয়ার পর সবুজকলি সেন বলেন, “এটাই প্রত্যাশিত ছিল। এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত প্রতিশোধের প্রকাশ। তদন্তে গাফিলতি থাকায় আমরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।” একই ভাবে ১৫ মাস পরে অবসর নেবেন বিশ্বভারতীর তৎকালীন বৃত্ত আধিকারিক ও বোটানির অধ্যাপক শমিত রায়। তিনি বলেন, “শুক্রবার রাতে জানতে পারি। এই সিদ্ধান্ত বেআইনি। এর পিছনে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। অত্যন্ত বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।” অপর আধিকারিক সৌগত চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে রবীন্দ্র ভবনে কর্মরত। তবে বরখাস্তের চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। এদিকে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার জানান, তিন আধিকারিককে বরখাস্ত করার বিষযে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই।