ছেলের অকালমৃত্যুর শোক ভুলে বৌমাকে পাত্রস্থ করে সমাজকে বার্তা বিজ্ঞানকর্মীর

ছেলের অকালমৃত্যুর শোক ভুলে বৌমাকে পাত্রস্থ করে সমাজকে বার্তা বিজ্ঞানকর্মীর

কলকাতা: সংসারে অভাব অনটন, একমাত্র পুত্রের অকাল মৃত্যু তাঁকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করলেও তাঁর বিজ্ঞানমনস্ক মনকে হার মানাতে পারেনি৷ যুক্তির কাছে হার মেনেছে অন্ধবিশ্বাস৷ তাই তো ছেলেকে হারিয়েও নিজের পুত্রবধূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আবার বিয়ে দিলেন তাঁর৷ সমাজের সমালোচনা-চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই নিজের পুত্রবধূকে পাত্রস্থ করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের যুক্তিবাদী সেলের পূর্ব মেদিনীপুরের সম্পাদক নকুল ঘাটি। 

আরও পড়ুন- বিয়ের দিন হবু বরের বিরুদ্ধে থানায় গেলেন পাত্রী! সব হাতিয়ে নিখোঁজ ‘অধ্যাপক’ বর

পরিবেশ সচেতনতার বার্তা নিয়ে ঘুরে বেরানো নকুলের আরও একটি পরিচয় আছে৷ তিনি হলেন ‘স্নেক ম্যান’৷ এলাকায় সাপ দেখলেই তাকে মেরে ফেলা নয়, বরং মানুষের বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতেই সাপ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান তিনি৷ তাই তো কোথাও কোনও বিষধর সাপের দেখা মিললেই ডাক পড়ে নকুলের৷ এহেন নকুল নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়েও সমাজকে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বার্তা দিয়ে গেলেন৷ 

২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর৷ এক বাইক দুর্ঘটনায় মারা যায় তাঁর একমাত্র ছেলে অর্ণব ঘাটি৷ অর্ণব আর শুভ্রার তিন বছরের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে৷ শুভ্রার বয়স মাত্র ২৫৷ কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পরেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শ্বশুর শাশুড়িকে ছেড়ে মা-বাবার কাছে ফিরে যাননি তিনি৷ কিন্তু বৌমা আর নাতির ভবিষ্যতের কল্পনা আকুল করে তুলেছিল নকুলকে৷ তাঁদের ভবিষ্যতের প্রশ্নটাই সবচেয় বড় হয়ে উঠেছিল নকুলের কাছে৷ নকুলের কথায়, ‘‘আমি আর আমার স্ত্রী সব সময়েই ভাবতাম অল্প বয়সে বিধবা হয়ে কী ভাবে একাকী জীবন কাটাবে বৌমা। নাতির ভবিষ্যৎ নিয়েও খুব চিন্তা হত। তাই সমাজ কী বলবে, সে কথা না ভেবে নতুন করে বৌমার বিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিই।’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, ‘আমাদের কথা ভেবে বৌমা যদিও এই বিয়েতে রাজি ছিল না৷ কিন্তু তাঁকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করানো হয়৷ পাত্রের খোঁজও মেলে৷ পাত্র বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত৷ বাড়ি রামগোপালচকে৷ উনি আমাদের পরিবারের প্রস্তাবে রাজি হন৷’’

গত সোমবার সম্পূর্ণ কোভিড বিধি মেনে সাত পাকে বাঁধা পড়েন মধু ঘাটি ও শুভ্রা মালাকার ঘাটি৷ উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্যরাও৷ নব দম্পতিকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন সমাজকর্মী সোমা চৌধুরী৷ তিনি বলেন, নকুলবাবুকে অনেক দিন ধরেই চিনি৷ উনি যে এই ধরনের কাজ করবেন, সেটা তো স্বাভাবিক৷ উনি আমাদের সকলের চোখ খুলে দিলেন৷’’ শুভ্রা বলেন, ‘‘আমি এই পরিবারের মেয়ে হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম৷ ওঁরা আমাকে নতুন জীবন দান করল৷ এই ভাবেও যে জীবন শুরু করা যায়, আমি কখনও দিন ভাবিনি৷’’ তবে শুভ্রার স্বামীকে জামাই নয়, ছেলে হিসাবেই দেখতে চান নকুলবাবু৷  


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − eight =