দিনভর উত্তেজনা সঙ্গে নিয়েই শেষ তৃতীয় দফার নির্বাচন

দিনভর উত্তেজনা সঙ্গে নিয়েই শেষ তৃতীয় দফার নির্বাচন

 

কলকাতা: দিনভর প্রবল উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, একাধিক জায়গায় প্রার্থীদের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর থেকে শুরু করে শারীরিক হেনস্থা… এই ছিল বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট পর্ব। প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হলেও দিনের শেষে সেই ‘চেনা ছন্দ’ই দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গে। আজ দিনের শেষে বাংলায় প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। 

বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া তৃতীয় দফার ভোট ও শান্তিপূর্ণ বলে আজ জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব৷ কমিশনের দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, আরামবাগ খানাকুল গোঘাট উলুবেড়িয়া উত্তর বিষ্ণুপুর সহ বহু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা  ঘটে৷ এই ঘটনায় মোট ১১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এছাড়াও উলুবেড়িয়া উত্তরে তিনটি ইভিএম ও চারটি ভিভিপ্যাট বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় একজন সেক্টর অফিসার ও একজন এসআই ও তিন হোমগার্ডকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ ওই ঘটনায় আরও দুই সেক্টর অফিসারকে ভোটের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে কমিশনের তরফে৷ একইসঙ্গে ভিডিও করে ওই ইভিএম ও ভিভিপ্যাটগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি কমিশনের৷ ওই ভোট যন্ত্রগুলি পুনরায় নির্বাচনে ব্যাবহার করা হবে না বলেও  জানিয়েছে কমিশন৷ গোঘাটে তৃণমূল সভাপতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব৷ এছাড়াও এদিন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,  দীর্ঘদিন ধরে একই বিধানসভা কেন্দ্রে ৮ রিটার্নিং অফিসার থাকার ফলে তাঁদের সরানো হয়েছে৷ এতদিন এই নিয়ম কলকাতায় লাগু ছিল না৷ এবারই প্রথম এই নিয়ম চালু হল কলকাতায়৷

বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেখানে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে হুগলি জেলায়, ৭৯.৩৬ শতাংশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পড়েছে ৭৬.৬৮ শতাংশ এবং হাওড়ায় পড়েছে ৭৭.১৩ শতাংশ ভোট। এদিকে, তৃতীয় দফায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি মিলিয়ে ৫ জন প্রার্থী এদিন আক্রান্ত হয়েছেন। সেই আক্রান্ত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুজাতা মণ্ডল খাঁ, নির্মল মাঝি এবং নাজিবুল করিম। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী পাপিয়া অধিকারী এবং বিধান পাড়ুইও আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস। সুজাতা মণ্ডল খাঁএবং পাপিয়া অধিকারী ওপর যে হামলা হয়েছে সেই সংক্রান্ত ঘটনার রিপোর্ট ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশন এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের কাছে। সকাল থেকেই দফায় দফায় একের পর এক প্রার্থী আক্রান্ত হয়েছেন এ দিন। খানাকুলের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর নাজিবুল করিমকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়েছে। ফলতার বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে, তৃতীয় দফা নির্বাচনের দিন নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে কলকাতার ৮ বিধানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারকে অপসারিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পোর্ট, ভবানীপুর, এন্টালী, বেলেঘাটা, শ্যামপুকুর, জোড়াসাঁকো, কাশিপুর বেলগাছিয়া ও চৌরঙ্গী কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসারদের। নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর একই পদে কোনও রিটার্নিং অফিসার থাকলে তাকে সরিয়ে দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। তবে এই নিয়ম এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র জেলাগুলির জন্যই কার্যকর ছিল। কলকাতার জন্য এই নিয়ম খাটতো না। এই প্রথমবার কলকাতাতেও এই নিয়ম কার্যকর করল নির্বাচন কমিশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 11 =