কলকাতা: করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এই বছর অনেকটাই ম্লান উৎসবের আমেজ৷ মানুষের মনে নেই সেই উদ্দীপনাও৷ চারিদিকেই বিষন্নতার ছাপ৷ লকডাউনে ঘরবন্দি জীবনে ছেদ পড়েছে একের পর এক প্রাণের উৎসবে৷
এই বছর ফিঁকে ছিল হোলির রং৷ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে করোনা সংক্রমণ রুখতে চলতি বছর রং খেলেনি দেশের অধিকাংশ মানুষ৷ পালিত হয়নি বিশ্বভারতীয় বসন্ত উৎসবও৷ আয়োজন প্রায় সারা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শেষ লগ্নে প্রশাসনের তৎপরতায় তা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ৷ করোনা জল ঢালে যাবতীয় পরিকল্পনায়৷
এর পর আসে নববর্ষের পালা৷ কিন্তু করোনার বিষে ভেস্তে গিয়েছে সেই আনন্দও৷ প্রতি বছর মহা সমারোহে বাংলা জুড়ে পালিত হয় পয়লা বৈশাখ৷ নতুন আশা, নতুন উদ্দমে জেগে ওঠে মন প্রাণ৷ পাড়ার দোকান থেকে টিভির পর্দা সর্বোত্রই থাকে বর্ষবরণের উন্মাদন৷ কিন্তু এই বছর হালখাতাটাও হয়নি৷ হয়নি কোনও উৎসব৷ নতুনের সূচনায় প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে পথে নামেনি মানুষের ঢল৷ করোনার কালো ছায়ায় তলিয় গিয়েছে বর্ষবরণ৷ নতুন বছরকে প্রাণ ভরে বরণ করতে পারেনি বাঙালি৷
তবে কলকাতায় অনলাইনের মাধ্যমে বছর শুরুর এই উৎসব পালন করে 'কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি' ৷ যেখানে অনেকেই ই-মেইলের মাধ্যমে শেয়ার করেন তাদের নিজেদের আঁকা ছবি, নাচ, গান, আবৃত্তি৷ এই বছর পালিত হয়নি অক্ষয় তৃতীয়াও৷ বাংলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধুমধামের সঙ্গেই পালিত হয় এই দিন৷
ফি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার রাতে অযোধ্যা পাহাড়ে প্রথা মেনে শিকার উৎসব পালন করেন সাঁওতাল শ্রেণির মানুষ৷ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই দিন অযোধ্যায় ভিড় জমান শিকারিরা৷ তির-ধনুক, বল্লম বা কুঠার নিয়ে পাহাড়ে দাপিয়ে বেড়ান তাঁরা৷ শিকার করার পর অনেকে পাহাড়েই মাংস রান্না করে খান৷ সাঁওতালরা মনে করেন, এই শিকারে সন্তুষ্ট হন তাঁদের দেবতা৷ এই উৎসবে অবশ্য মারা পড়ে বহু পশু৷ পশু শিকার রুখতে বন দফতর বুদ্ধপূর্ণিমার দিন নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে৷ এতে শিকার কিছুটা কমলেও, একেবারে বন্ধ হয়নি৷ কিন্তু এই বছর লকডাউনের জেরে পর্যটকহীন ছিল পাহাড়৷ ফলে উৎসবও পালিত হয়নি৷
আবার লকডাউনের জেরে ভেস্তে গিয়েছে মালদা জেলার গাজলের পান্ডুয়া উরুস উৎসবও। এই উৎসবে ফি বছর ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। তবে এবারের ছবিটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। চলতি বছর পালিত হয়নি রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসবও৷ প্রতিটি বাঙালির কাছে এই উৎসব অত্যন্ত কাছের৷ প্রতি বছর ২৫ বৈশাখ ভোরে শঙ্খ বেজে ওঠে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে৷ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিটি পাড়ায় সমারোহে পালিত হয় রবীন্দ্র জয়ন্তী৷ কবি গুরুর কবিতা, নৃত্যনাট্য বা সঙ্গীতে মুখর হয়ে ওঠে ২৫ বৈশাখ৷ কিন্তু ১৫৯ বছরে এ এক অন্য রবীন্দ্র জয়ন্তী দেখল বাংলার মানুষ৷
সব শেষে আজ খুশীর ইদ৷ সেই সঙ্গে নজরুল জয়ন্তী৷ কিন্তু আজ বাড়িতে বসেই ইদ পালন করলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা৷ শোনা যায়নি মাইকের গান৷ তেমনই বিভিন্ন জায়গায় আজ অনলাইনেই পালিত হল বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্মদিন৷
একদিকে করোনা মহামারী, তার উপর আমপানের তাণ্ডব, বঙ্গদেশে একের পর এক বিপর্যয় উড়িয়ে দিয়েছে সমস্ত খুশী, আনন্দ, উৎসব৷ এখন প্রতিটি দীর্ঘনিঃশ্বাসে ফিরছে ভবিষ্যৎ চিন্তা!