কলকাতা: ইউ ফর ‘আগলি’ লেখা ইংরেজি বর্ণমালা শেখানোর একটি বই নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাক হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। কারণ আগলি অর্থাৎ কুৎশ্রী বোঝাতে এমন এক মহিলার ছবি আঁকা হয়েছে যার গায়ের রং কালো। বর্ণবিদ্বেষের প্রসঙ্গ তুলে ব্যাপক হই চই শুরু হয় এই নিয়ে। সংবাদমাধ্যমের তল্লাশিতে জানা যায় ওই বইটি বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ানো হচ্ছে। বাণী প্রকাশনী সংস্থার ‘চাইল্ড স্টাডি’ নামক ’এই বইটির লেখিকার নাম রুমা রায় বলে জানা গিয়েছিল। ১১ জুন সাংবাদিক সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধায় জানিয়ে দেন এই বই রাজ্য সরকারের অনুমোদিত নয় এবং শিক্ষা দফতরকে না জানিয়েই এই বই পড়ানো হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে রাজ্যের সর্বত্র এই বই পঠন-পাঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সঙ্গে জানিয়ে দেন এই বইটি পড়ানোর অপরাধে শ্রাবণী মল্লিক এবং মন্দালি দাস নামক দুই শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে এই ঘোষণা এবং বরখাস্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। ১৫ জুন শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বরখাস্ত প্রত্যাহার এবং সিলেবাস পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রকের এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দাও করা হয়েছে এই চিঠিতে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষে সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডার তরফে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার ২০১৩ সালে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করলেও এখনও কোনও সিলেবাস তৈরি করেনি। ‘কুটুম কাটাম’ এবং ‘মজারু’, নামে দুটি বই যাতে রয়েছে কিছু ছড়া এবং আঁকিবুকি। মাসখানেকের মধ্যেই ছাত্রদের পড়া হয়ে যায় এগুলি। বছরের বাকি দিনগুলিতে আর কী শেখানো যায় তা নিয়ে সমস্যায় পড়েন শিক্ষক শিক্ষিকারা। বাধ্য হয়েই পাঠক্রমের বাইরের বই পড়াতে হয়। অনেকক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও বেসরকারি স্কুলের বই পড়াতে অনুরোধ করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজি এবং অঙ্ক, তিনটি বিষয়ে মিলিয়ে ‘আমার বই’ নামক একটি বই পড়ানো হয়। চিঠিতে এই বইটিকে ‘খিচুড়ি বই’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে এই বই নিয়ে সন্তুষ্ট নন অভিভাবক বা শিক্ষক কেউই। ফলে পাঠক্রম বহির্ভূত বই পড়াতে হয় বাধ্য হন তাঁরা।
এমতাবস্থায় শিক্ষকদের প্রশংসা না করে বরখাস্ত করায় বিস্মিত হয়েছে শিক্ষক সমিতি। বলছেন, শিক্ষকরা শুধু সরকারি বই পড়ালে ছাত্রসংখ্যা কমতে থাকে। বিপদ সেক্ষেত্রে তাঁদেরই। এরপর ‘ইউ ফর আগলি’ প্রসঙ্গ তুলে চিঠিতে জানানো হয়েছে এই ঘটনা অনভিপ্রেত, কিন্তু সেক্ষেত্রে দোষ তো প্রকাশনা সংস্থার, শিক্ষিকাদের তো নয়। সরকারি বইতেও ভুল থাকে এমন দাবি করে বলা হয়েছে কিছুদিন আগে সরকারি বইতে শহিদ ক্ষুদিরামকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে লেখা হয়েছিল। পরে সেই ভুল শুধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এর দায় সরকার এড়িয়ে গেলেও আজ দুই শিক্ষিকাকে শাস্তি দেওয়া হল যা চূড়ান্ত অনৈতিক। পরিশেষে, চিঠিতে চারটি দাবি জানানো হয়েছে। এক, শিক্ষিকাদের ওপর থেকে বরখাস্তের আদেশ তুলে নিতে হবে। দুই, এই ঘটনার অজুহাতে শিক্ষা সহায়ক নানান বই পড়ানো বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক সহ বিজ্ঞানভিত্তিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে। চার, পাঠক্রম রচনায় শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষক সংগঠনগুলির মতামত নিতে হবে।