বারুইপুর: করোনার দাপটে বছর দুয়েক বন্ধ ছিল স্কুল। নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ থেকে আবার সরকারি নির্দেশমতো স্কুল খুলেছে। স্কুল খোলার পর দুটো ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ছে। একদল যারা বাড়িতে থেকে অস্থির হয়ে পড়েছিল তারা স্কুলমুখো হয়েছে। পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে তারা আজ বড়োই আপ্লুত। অন্য যে ছবিটি সামনে আসছে তা বড়ই করুন। অন্য আর এক দল ছাত্র ছাত্রী আজ স্কুল থেকে কয়েক যোজন দূরে। স্কুল যেন তাদের আর হাতছানি দেয় না। তাদের মধ্যে কারোর কারোর অর্থের অভাবে স্মার্ট ফোন না থাকার দরুন পড়াশোনা ছেড়ে গ্যারাজে কাজ করছে, কেউ আবার মায়ের সঙ্গে লোকের বাড়ি কাজে লেগে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেকেরই পড়াশোনায় মাথা খুব পরিষ্কার। স্কুল খোলার পর তাদের স্কুলে না দেখে চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এইরকম অবস্থা হয়েছে সুন্দরবনের কুলতলির ভগবান চন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেন, আর দেরি না করে এবার তারা ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন। তাঁরা দুটো বাইক ও একটা অটোর ব্যবস্থা করে বেরিয়ে পড়েন। প্রধানশিক্ষক শান্তুনু ঘোষাল, শারীরশিক্ষার শিক্ষক প্রবীর রায়, ইংরেজির শিক্ষক মোহিত হোসেন, শিক্ষিকা রিনি তালুকদার, সংস্কৃতের শিক্ষক সুবিনয় সর্দার, বিজ্ঞানের শিক্ষিকা স্মিতা মাইতিরা কুলতলির পালের চক, মেটেখোরা, দিঘির পাড় এলাকায় পরিস্থিতি দেখতে যান। দশম শ্রেণীর ছাত্রী হাবিবা মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, স্কুল বন্ধের পর থেকেই হাবিবা মায়ের সঙ্গে বাড়ির কাজ করা শুরু করেছিল পড়াশোনা তখন থেকেই তার বন্ধ। সে আবার স্কুলে যাবে বলে শিক্ষকদের কথা দিয়েছে।হাবিবার পাশের পাড়ায় থাকে কৃষ্ণা মণ্ডল। সে স্কুল বন্ধ হওয়ার পরেই মাসির বাড়িতে চলে গেছে। তখন থেকেই তার পড়াশোনা লাটে উঠেছে। তার বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছে, বাড়িতে ফেরত এনে তাকে আবার স্কুলে পাঠানো হবে। দশম শ্রেণীর ছাত্র আশিক রহমান মোল্লা জানিয়েছে, তারা খুবই দরিদ্র। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাবার সঙ্গে মাটি কাটার কাজ করতাম। বাড়ির দারিদ্রতা মেটানোর জন্যই এই কাজে লেগে পড়েছিলাম। শিক্ষকরা বাড়িতে এলেন এবার তাহলে বাবাকে বুঝিয়ে স্কুলে যাবো। কুলতলির ভগবান চন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন তারা ছাত্র ছাত্রীদের বাড়িতে যাওয়ায় অভিভাবকরা আবার তাদের স্কুলে পাঠানোর কথা ভাবছে। শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, ছাত্র ছাত্রীরা আবার স্কুলে ফিরবে।অনেকেই অভাবের তাড়নায় অন্য পেশায় চলে গিয়েছিল , আবার তারা স্কুলে ফিরবে বলে শিক্ষকদের জানিয়েছে।
অন্যান্য স্কুলের মতো জামতলা ভগবান চন্দ্র হাই স্কুলও ১৬ নভেম্বর খোলে। ওই স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা এগিয়ে এসেছে। ওই স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণীতে উপস্থিতি চোখেই পড়ছে না। তাই চিন্তায় রয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, ছাত্র ছাত্রীরা না আসায় রেজিস্ট্রেশনের কাজেও এগোতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এদিকে দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের শংসাপত্র স্কুলে পরে আছে. সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা স্কুলগুলির।