সরকারি ত্রাণ তহবিলে কত কোটির দান পেয়েছে রাজ্য? তথ্য দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

সরকারি ত্রাণ তহবিলে কত কোটির দান পেয়েছে রাজ্য? তথ্য দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতা:  উম্পুনের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যজীবীরাও৷ বুধবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে এই মৎস্যজীবীদের জন্য বেশ কিছু ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উম্পুনের দাপটে অনেক নৌকা ভেঙে গিয়েছে৷ মৎস্য দফতর থেকে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট নৌকাগুলির জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে৷ এই কাজের জন্য ১৭.২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷  সরাসরি উপভোক্তার ব্যাংক অ্যাকউন্টে এই টাকা পাঠানো হবে৷ এছাড়াও ৩৭,৭১১টি জাল কিনে দেওয়া হবে৷ জাল প্রতি ২,৬০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে৷

প্রাণী সম্পদের জন্য ৩৭ কোটি টাকা ছাড়া হবে৷ গবাদি পশুর জন্য ২৪ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, হাঁস-মুরগী প্রতিপালনের জন্য ১৪.১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ ওষুধ ও ভ্যাকসিনেকর জন্য ৫ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে৷ পশু চিকিৎসার জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ 

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবুজের অনেকটা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে৷ সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ অরণ্য অনেকটা বাঁধের মতো কাজ করে৷ এছাড়াও সুন্দরবনের অন্যতম সৌন্দর্য্য হচ্ছে ম্যানগ্রোভ৷ কিন্তু প্রাকৃতিক তাণ্ডবে বহু গাছ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে৷  আগামী ৫ তারিখ আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসে বন দফতরের পক্ষ থেকে সুন্দরবনে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যাতে সুন্দরবনের মাটি আরও শক্ত হয়৷ ওই দিন কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পুরসভাও গাছ লাগাবে৷

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েও বিরোধীদের কড়া জবাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, বাংলা নাকি পরিযায়ী শ্রমিকদের ঢুকতে দেয়নি৷ বাংলায় ঢুকতে না দিলে এত লোক কী ভাবে এল? ইতিমধ্যেই ট্রেনে-বাসে সাড়ে আট লক্ষ লোক এসে গিয়েছে৷ আগামী ১০ জুনের মধ্যে মোট ১০ লক্ষ লোক বাংলায় ঢুকে যাবে৷ পরিযায়ীদের ফেরাতে সব রকম ব্যবস্থা করেছে রাজ্য৷ করোনা-সঙ্কট মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের আপৎকালীন ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মানুষের কাছ থেকে পেয়েছে ১৫০ কোটি৷ ইতিমধ্যেই ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে বলেও জানান মমতা৷

তিনি বলেন, লকডাউনের আগে যদি পরিকল্পনা করে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হত, তাহলে তিন মাস এত কষ্ট সহ্য করতে হতো না তাঁদের৷ যাঁরা বাইরে আটকে ছিলেন, তাঁদের ঠিক মতো খেতে দেওয়া হয়নি, চিকিৎসা করা হয়নি৷ বিরোধীদের কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনের ভাড়া দিয়েছে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ রাজ্যে আসার পর তাঁদের বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থাও আমরা করেছি৷ আর যাঁরা ট্রেনের ভাড়াটুকু দিতে পারেন না, তারা দয়া করে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্ররোচনা দেবেন না৷’’  তিনি জানান, ২৩৫টি ট্রেনের ভাড়া হিসাবে ২৫ কোটি টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ ইতিমধ্যেই ১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে৷ ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টিনে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকা করে খরচ হচ্ছে৷ স্ক্রিনিং করতেও প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রাজ্যের৷  এছাড়াও বাংলা ‘স্নেহের পরশ’-প্রকল্প চালু করে ৪.৫৭ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের হাতে ১ হাজার টাকা করে ৪৫.৭০ কোটি টাকা পৌঁছে দিয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ 

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে মাস্ক বানানো হবে৷ যা স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে বিনা পয়সায় বিতরণ করা হবে৷ আড়াই-তিন কোটি মাস্ক তৈরি করা হবে৷ পড়ুয়া ছাড়াও ১০০ দিনের কাজের শ্রমিক এবং বিভিন্ন দফতরেও দেওয়া হবে এই মাস্ক৷ এর জন্য যে ১৫০ কোটি অনুদান পেয়েছে, তার থেকেই টাকা নেওয়া হবে৷ অন্যদিকে, উম্পুপ পরবর্তী পরিস্থিতি বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান ওয়েস্ট বেঙ্গস স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ড যথাসাধ্য চেষ্টা করছে৷ বেশিরভাগ জায়গাই স্বাভাবিক৷ তবে কিছু জায়গায় জল জমে থাকায় বিদ্যুতের খুঁটি বসানো সম্ভব হচ্ছে না৷ বাঁধ সারানোর জন্যও সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে৷ তবে এত দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব নয়৷ আগামী ৬ তারিখ একটা জোয়ার আসছে৷ এতে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *