কলকাতা: এপ্রিলেই কলকাতা সহ রাজ্যের ১১০টি পুরসভার নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা। নবান্ন সূত্রে খবর কলকাতা সহ ছ’টি পুর নিগম এবং ১০৪টি পুরসভার ভোট একই সঙ্গে সেরে ফলতে চায় রাজ্য সরকার।সেই মোতাবেকই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর এই পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই ইভিএমের বদলে ব্যালটে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতবছর লোকসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের পর ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনে ব্যালট ফেরানোর দাবিতে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো।তিনি এনিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলনের ডাক দেন।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আন্দোলনের প্রশ্ন ধামাচাপা পড়ে গেছে।কিন্তু এবার রাজ্যের পুরভোটে ইভিএম বাতিল করে ব্যলট ফেরানোর সিদ্ধান্তের মধ্যে ইভিএম সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বিরূপ মনোভাবের প্রতিফলন দেখছে রাজনৈতিক মহল।রাজ্যে পঞ্চায়েত, পুরসভার ভোট করায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে পুরভোটে ইভিএম ফেরানোর জন্য কমিশনকে ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।ইভিএম চালু হওয়ার পর থেকে রাজ্যে এত দিন পর্যন্ত সব পুরভোটেই তা ব্যবহার করা হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, পুরভোটে ব্যালট ফেরানো হবে কিনা তা নিয়ে এখনও চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি ।তবে শেষ পর্যন্ত তা হলে আদতে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা থেকে আবার অতীতের ঝঞ্ঝাট ভরা পদ্ধতিতে ফিরতে হবে বলে অনেকের অভিমত। তাঁদের মতে সেক্ষেত্রে ফল ভোগ করতে হবে ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মী আধিকারিক থেকে সাধারণ মানুষের।তাঁদের বক্তব্য ইভিএম আসার পর ভোট প্রক্রিয়া অনেক সরল হয়েছে। ভোট গণনার সময়ও অনেক কম লাগে।গণনা প্রক্রিয়াও অনেক সরল ও নির্ভূল। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের শহুরে ভোটাররা অনেকেই জীবনে ব্যালট পেপার চোখে দেখেন নি। তাঁরা প্রথম থেকেই ব্যালট পেপারে ভোট দিতে অভ্যস্থ। পুর ভোটে ইভিএম ফিরলে সমস্যায় পরবেন তাঁরাও।
যদিও বিরোধীরা ইভিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও নির্বাচন কমিশন তাঁদের যাবতীয় অভিয়োগ খারিজ করে দিয়েছে।ইভিএমে কারচুপি করে দেখানোর জন্য কমিশনের খোলা চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করেনি কোন বিরোধী দল। কিন্তু অভিযোগের পর্ব চলছেই। কমিশনের মতে রজ্যে বা কেন্দ্রে যে দলই ভোটে পরাজিত হোক তারা ইভিএমকেই দায়ী করে। কিন্তু নির্বাচনে ইভিএম বাতিল করার সিদ্ধান্ত এখনও কোন রাজ্য গ্রহণ করতে পারেনি। এরাজ্যে তা বাস্তবায়িত হলে সেটা রাজ্যের পক্ষে আত্মঘাতী হবে বলে কমিশনের কর্তাদের অভিমত। কমিশন সূত্রে খবর , চলতি বছরে এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে ভোট হতে পারে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যের ৯২টি পুরসভার। ১৭ জানুয়ারি তাদের ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশের পরে ১০ সপ্তাহের ব্যবধান রেখে ভোটের দিন ঘোষণা করা যায়। তার ভিত্তিতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ রাজ্যে পুরভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশের আগে ওয়ার্ডের ডিলিমিটেশন বা পুনর্বিন্যাস করার কথা। কিন্তু এবার ডিলিমিটেশন ছাড়াই ওয়ার্ডের সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই পুরভোট হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেরাজ্য সরকার। একই দিনে ভোট হবে না, না কি কয়েক দফায় ভোট হবে, তার জন্য নবান্নের দিকে তাকিয়ে আছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আইন অনুযায়ী, মনোনয়ন পত্র জমা ও প্রত্যাহার থেকে ভোটের দিনক্ষণ সবই চূড়ান্ত করবে রাজ্য সরকার। নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার পর্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আলোচনার কথারই উল্লেখ আছে আইনে।