‘গাদাগাদি করে ট্রেন চালাচ্ছে, তাহলে মন্দির-মসজিদ-গির্জা খুলতে কি দোষ?’

‘গাদাগাদি করে ট্রেন চালাচ্ছে, তাহলে মন্দির-মসজিদ-গির্জা খুলতে কি দোষ?’

কলকাতা: নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে করোনা নিয়ে আরও একবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাশাপাশি  লকডাউন পরবর্তী সময়ে রাজ্যের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন তিনি৷ লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কিছু ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ 

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শতাব্দীর সবচেযে বড় বিপর্যয় করোনা৷ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে লকডাউনে প্রভাবিত মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি৷ করোনাকে প্রতিহত করতে আমাদের জীবনধারনের পদ্ধতি বদলাতে হচ্ছে৷ আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের বদলাচ্ছি৷ কিন্তু এর মধ্যেও অনেক সময় দেখা যাচ্ছে মানুষের জমায়েত৷ বাজারে উপচে পড়া ভিড়৷ তাঁরা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, এর ফলে কিন্তু রোগটা বাড়ছে৷ প্রথম দুই তিন মাসে নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলা৷ কিন্তু প্রচুর মানুষ বাইরে থেকে আসছে৷ বাংলায় করোনা সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে৷ 

সরকারি বা বেসরকারি দফতরে কর্মীদের ৭০ শতাংশ  অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে৷ প্রতি ক্ষেত্রে ৬ থেক ৮ ফুট একটা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কম লোক নিয়েই বাস চালাতে হচ্ছে, তাতে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে৷ বেসরকারি বাস মালিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে৷ বাস মালিকদের মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, যতগুলো সিট আছে, ততজন যাত্রী নিন৷ তবে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে এবং  বাসে ওঠার সময় স্যানিটাইজ করতে হবে৷ জোড় করে বাসে ওঠার জন্য কনট্রাক্টরের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না৷ বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাবে না৷ 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়াচ্ছেন৷ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে৷ কোনও কিছু নিশ্চিত না হয়ে শেয়ার করবে না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ হঠাৎ আসতে আসতে মনে হল লকডাউনে সবকিছু থমকে গিয়েছে৷ মসজিদে যাওয়া বন্ধ, গুরুদ্বারে যাওয়া বন্ধ, মন্দিরে যাওয়া বন্ধ৷  ১ জুন সকাল ১০ টা থেকেই মন্দির মসজিদ গির্জা খোলার অনুমতি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, বাইরে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা আসছে৷ ২৩৫টি ট্রেনের ভাড়া সরকার দিচ্ছে৷ তা সত্বেও ট্রেনের মধ্যে একটা সিটে কেন ৩ জন বসানো হবে? ৪৮ ঘণ্টা যদি বদ্ধ জায়গায় অনেক মানুষ থাকে, তাহলে সংক্রমণ তো বাড়বেই৷ তাঁরা আসছে মহারাষ্ট্র, চেন্নাই, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লির মতো হটস্পট থেকে৷ সেখান থেকে যাঁরা আসছেন, সেখানে তাঁদের কোনও পরীক্ষাও হয়নি৷ প্রয়োজনে বাড়তি ট্রেন দেওয়া উচিত রেল মন্ত্রকের৷  রেল মন্ত্রকের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা ট্রেনে তুলে দিচ্ছেন, ক্ষমতার থেকে দ্বিগুণ সংখ্যক যাত্রী আসছে৷  সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না৷ শ্রমিক এক্সপ্রেসের নামে কি করোনা এক্সপ্রেস চালাচ্ছেন?  যখন বড় কোনও তীর্থযাত্রা হয়, তখন যেমন অতিরিক্ত ট্রেন চালানো হয়, তেমনই  শ্রমিক স্পেশাল কেন বেশি করে চালানো হচ্ছে না, কেন বগি বাড়ানো হচ্ছে না?  গাদাগাদি করে লোক আনা হচ্ছে৷ তাহলে মন্দির, মসজিদ, গির্জা খুলতে কি দোষ? 

তাই এবার খুলবে মন্দির, মসজিদ, চার্ড, গুরুদ্বরা৷ তবে একসঙ্গে ১০ জনের বেশি ঢোকা যাবে না৷ কোনও বড় অনুষ্ঠান করা যাবে না৷ শুধু দর্শন করেই বেরিয়ে আসতে হবে৷ কোনও জমায়েত করতে দেওয়া হবে না৷ একসঙ্গে কোনও ভিড় হলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ মন্দির-মসজিদে স্যানিটাইজের ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটু একটু করে খুলুক, আমাদের দেব-দেবীর পুজো হোক৷ কিন্তু বড় কোনও উৎসব এখনই হবে না৷ আমরা সব ধর্মকে ভালবাসি, সব সম্প্রদায়কে ভালবাসি৷   

৮ জুন থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা পুরোপুরি খোলা হবেও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ শ্রমিকরাও কাজে যোগ দেবেন বলে জানান৷ চা, জুটমিলে ১০০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করা যাবে৷ তবে স্কুলগুলো জুন মাসে বন্ধ থাকবে৷ সংক্রমণ এড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াই, বিল্ডিংয়ে যে হোম ডেলিভারিগুলি আসছে, সেগুলি বেশ কিছুক্ষণ বাইরে রাখুন৷ ৫-৬ ঘণ্টা রাখার পর ঘরে তুলুন৷  তিনি জানান, যাঁরা বাইরে থেকে আসছে, গ্রামে গ্রামে স্কুলগুলিতে তাঁদের কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে৷ সেখানে সাত দিন থাকার পর তাঁদের টেস্ট করা হবে৷ নেগেটিভ হলে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ গ্রামে যাতে করোনা না ছড়ায়, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ স্কুলগুলি পরে স্যানিটাইজ করতে হবে, কারণ সেখানে ছাত্রছাত্রীরা পড়ে৷ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, যাঁরা বাইরে থেকে করোনা নিয়ে আসছেন, দোষ তাঁদের নয়৷ যেখানে থেকে আসছে, সেখানে কেন টেস্ট করা হয়নি? প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *