কলকাতা: প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে সবজি চাষের। রাজ্যের অধিকাংশ ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকার এই প্রথম রাজ্যের সব সবজি চাষীদের শস্য বীমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
লকডাউন উঠে গেলেই সর্বভারতীয় স্তরে কাজ করা কৃষি বিমা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চলেছে রাজ্য কৃষি দফতর৷ এতদিন শুধুমাত্র ধানচাষীরা শস্য বীমার সুবিধা পেতেন৷ এখন থেকে সবজি চাষীরাও বীমার সুবিধা পাবেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে৷ কিন্তু রাজ্য সরাকারের এই উদ্যোগকে বিলম্বে বোধদয় বলে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা৷ তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের মতো সবজি চাষে অগ্রণী রাজ্যের এবিষয়ে আগেই উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল৷ তাহলে আম্ফান ঝড়ে রাজ্যের সবজি উৎপাদকদের সর্বশান্ত হতে হত না৷
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বিঘার পর বিঘা জমির ফসল তছনচ হয়ে গিয়েছে৷ মাথায় হাত পড়েছে সবজি চাষীদের৷ কৃষি দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এরাজ্যে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৫৫ লক্ষ হেক্টর৷ এর মধ্যে সবজি চাষ হয় মোট ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে৷ রাজ্য জুড়ে প্রায় ২১ লক্ষ চাষি৷ সবজি চাষ লাভজনক হয়ে ওঠায় ক্রমশ চাষের ঝোঁক বাড়ছে৷ কিন্তু আম্ফানের তাণ্ডব কার্যত অযাচিত এক কালো মেঘের ছায়া ফেলেছে দিয়েছে৷
ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে কৃষি কর্তারা জানাচ্ছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ফসল সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ নদীয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় সবজি চাষ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ৷ সবজি চাষীদের এই দূরবস্থার স্থায়ী সমাধান করতে বীমা প্রয়োজন৷ কৃষি দফতরের খবর, এতদিন শস্য বীমার সুবিধা পেতেন শুধু মাত্র ধানচাষীরা৷ এবার সবজি চাষিদেরও তার আওতায় আনা হচ্ছে৷
এ প্রসঙ্গে কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একটি সর্বভারতীয় কৃষি বীমা সংস্থার সঙ্গে কথা বার্তা চলছে৷ লোকডাউন উঠে গেলে ভাবনা বাস্তবায়িত হবে৷’’ কৃষিবিশেষজ্ঞ প্রদীপ বাবুর কথায়, ‘‘কিছু বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, সারা দেশে এই প্রথম এ বিষয়ে সংগঠিত পদক্ষেপ৷’’ নবান্নের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু ঝা৷ তাঁর সাফ কথা, ‘‘সবজি চাষ খুব লাভজনক৷ তাই এই চাষে ভিড় বাড়ছে৷ এ ক্ষেত্রে বীমা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি উদ্যোগ৷’’
সরকারের বীমা ঘোষণায় স্বাভাবিক ভাবে খুশি চাষিরা চাইছেন, ঝড়ের ক্ষতি সামলাতে দ্রুত বীমার সিদ্ধান্ত রূপায়িত করুক সরকার৷ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে আরও একটা দাবি৷ চাষিদের বক্তব্য, শুধু জমির মালিকরা নন, এই বীমার সুবিধা যেন পান বরগাচাষীরাও৷