রাজ্য বাজেট শুধুতেই বন্ধ জুট মিলে মৃত্যু মিছিল শ্রমিক শিবিরে

রাজ্য বাজেট শুধুতেই বন্ধ জুট মিলে মৃত্যু মিছিল শ্রমিক শিবিরে

cfe46198a3fc371a673fa96965c6682a

চন্দননগর: হুগলি জেলার গোন্দলপাড়া জুট মিলের শ্রমিক মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত। অনাহারে ও দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই না করতে পেরে পর পর কয়েক জন শ্রমিকের  মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই মিলের শ্রমিক মহল।

জানা গিয়েছে, গোন্দলপাড়া জুট মিল প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ। আর এই মিল বন্ধ হওয়ার কারনে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী কাজ হারান। এই কারনে গত দুই বছরে তিন জন শ্রমিক  মানসিক অবসাদে মারা যান। পাশাপাশি প্রায় ছয় জন শ্রমিকের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। ২০২০ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেতেই পর পর দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। শুধু মাত্র অনাহার আর দারিদ্র্যতার কারণে।কাজ হারিয়ে তারা সর্বশান্ত তারা।আর এই চিন্তাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি গোন্দলপাড়া শ্রমিকদের।

মাত্র আট চল্লিশ ঘন্টার মধ্যে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল তারক ঠাকুরের। গোন্দলপাড়া জুটমিলের ব্যাচিং বিভাগের শ্রমিক ছিলেন তিনি । শুক্রবার মারা যান ৩৬ বছরের যুবক তেজনারায়ণ যাদব। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী সহ ছয়টি সন্তান। বড় ছেলের বয়স ছয় বছর। সদ্যোজাত একটি কন্যাসন্তান জানতেও পারল না তার  বাবার কথা।
গোটা জুটমিল শ্রমিক মহল্লা যেন অনহারের কবলে।বৃহস্পতিবার শ্রমিক মহল্লার নিজের বাড়িতে মারা যান বন্ধ জুটমিল শ্রমিক। বুধবার মধ্যরাতে তার বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ হয়নি। গোন্দলপাড়ার শ্রমিক মহল্লার বাড়িতেই তিনি মারা যান।কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য একটি জুটমিলে গিয়েছিলেন তেজনারায়ণ যাদব।
হাজিরা দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ মেলেনি। ফিরে এসেছিলেন বাড়িতে। রাতেই শুরু হয় বুকে যন্ত্রণা।তারপরই সব শেষ।  লোকসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে মুখে দু-তিন দিনের জন্য মিলের গেট খুললেও মেশিন চলেনি, মজুরিও পায়নি শ্রমিকরা। প্রায় ৫০০০ শ্রমিক, যার বেশিরভাগই অস্থায়ী বদলি শ্রমিক। উৎসবের মুখে দাঁড়িয়ে অসহায় শ্রমিকেরা শোনাচ্ছিলেন তাঁদের দুঃখের কথা। ভোট মিটে গেছে, রাজ্যের শাসক দলের মিল খোলা নিয়ে নাটক করার আর দায় নেই। তৃনমুল নেতাদের শ্রমিকদের দাবি প্রতিশ্রুতি পর প্রতিশ্রুতি কিন্তু জুট মিল আর খুললো না।শ্রমিকদের মৃত্যু হচ্ছে কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও হুঁশ নেই।

এই বিষয়ে হুগলি  লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা অসহায় শ্রমিক পরিবারগুলির পাশে আছি। বিজেপিকে শ্রমিক পরিবারগুলি ভোট দিয়েছে বলে তৃনমুল চক্রান্ত করে গোন্দলপাড়া জুট মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এই রকম  ঘৃন্য রাজনীতি করছে তৃনমূল। শ্রমিকদের মুখের অন্ন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।আমি জুট মিল খোলার জন্য পালামেন্টে কথা বলেছি।রাজ্য সরকার সদ ইচ্ছা দেখাচ্ছে না। তাই অচল অবস্থা হয়ে জুট মিল পড়ে রয়েছে।শ্রমিক মৃত্যু জন্য তৃনমুল দায়ী। আমি ওই অসহায় পরিবারগুলির পাশে আগেও ছিলাম আগামি দিনেও থাকবো। অপরদিকে স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ স্থানীয় বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনও গোন্দলপাড়া জুট মিল খোলার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। এই বিষয়ে ফোনে চন্দন নগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।সবমিলিয়ে রাজনৈতিক টানা পোড়েন বন্ধ হয়ে হুগলি জেলার গোন্দলপাড়া জুট মিল  কবে খোলে সেই দিকেই তাকিয়ে শ্রমিকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *