কলকাতা: রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে শনিবার পণ্য করকাঠামো সংক্রান্ত বিল পেশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন তিনি জিএসটি কাউন্সিলের সুপারিশ মেনে এই বিল পেশ করলেন। বিল পেশ করার সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন যে, ‘‘রাজ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে, স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে৷” তিনি আরও বলেন, “রাজ্যে আধুনিক শিক্ষা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের আমোদের নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷” জানান, রাজ্য সরকার মানবিকতা দেখিয়ে রাজ্যে সব ধর্মের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে সুচারুভাবে।
শনিবার পণ্য বিধানসভায় পরিকাঠামো বিল পেশ করার সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্কুলছুট কমানোর একটি তথ্য পেশ করে বলেন, ‘‘২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে যেখানে রাজ্যে স্কুলছুটের পরিমান ছিল ৩৯.৯৯ শতাংশ, ২০২০-২২ শিক্ষাবর্ষে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৪.৮২ শতাংশে৷” তিনি বলেন, এই সংখ্যা আরো কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এছাড়াও এদিন শিক্ষামন্ত্রী বিল পেশের সময় কেন্দ্র সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকারের কাছে বকেয়া টাকা না পাওয়ার কারণে রাজ্যের এই ৩.৫ শতাংশ অর্থনৈতিক ঘাটতি৷” অতিমারীর কারণে সমস্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরেও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঠিক বেতন প্রদানের কথা এদিন বলেন শিক্ষামন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সামাজিকভাবে রাজ্যকে উন্নীত করতে চেষ্টার কোনোরকম খামতি রাখেনি রাজ্য সরকার৷”
এছাড়াও, প্রাক্তন বাম সরকারকে কটাক্ষ করে শিক্ষামন্ত্রী এদিন বলেন, বাম আমলের রেখে যাওয়া ঋণে জর্জরিত রাজ্য, তার উপর করোনা অতিমারী এবং আমফান দুর্যোগের কারণে রাজ্যের এই বেহাল দশা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই প্রতিকূলতার পরেও রাজ্য সরকার রাজ্যবাসীকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করেছে, ছাত্রছাত্রী ও কৃষকদের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে৷ হয়েছে কর্মসংস্থান৷ কিন্তু তারপরেও ঘাটতির কারণে ৫ শতাংশ জিএসটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছি৷”
শিক্ষামন্ত্রীর এই পণ্য পরিকাঠামো বিলকে আক্রমণ করে সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “২০১০ সাল পর্যন্ত রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী যে ৩৫ টি প্রকল্পের শিল্যান্যাস করেছিলেন, তার শিলা কোথায়?” এছাড়াও তিনি রাজ্যের এই বাজেটকে কটাক্ষ করে বলেন, “রাজ্যবাসীর ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে করা হয়েছে এই বাজেট৷” তাছাড়া রাজ্যের অর্থনৈতিক ঘাটতি কমানোর একটি পথ বাতলিয়ে তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “এইসব মেলা, খেলা, উৎসব এবং খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দেওয়া বিজ্ঞাপনে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে সেই টাকা রাজ্যবাসীর কল্যাণের কাজে লাগানো হোক৷” রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সিপিএম বিধায়কের এই উক্তিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করলে তন্ময়বাবু মন্ত্রীকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, “আপনি যতবার নির্বাচনে দাঁড়াবেন, আপনাকে ততবার বড় মার্জিনেই হারাবো৷” প্রসঙ্গত, রাজ্য রাজনীতিতে দিন দিন ব্যক্তিগত আক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার রেশ রয়ে যাচ্ছে বিধানসভায়তেও। এই বিষয়কে নজরে রেখে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সব পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তা আদতে বিফলেই যায় অন্তিম পর্যায়ে।