জয়নগর: হুজুগে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তেরো পার্বণে অন্যতম হল শীতের আমেজ৷ শীতের এই আমেজকে চেটেপুটে নিতে চায় রসিক বাঙালি। শীতকালের বাঙালির জিভ স্বাদ পেতে চায় নলেন গুড় আর মোয়ার । মোয়া পেটে না পড়লে বাঙালির মনে হয় যেন কিছু একটা বাদ যাচ্ছে!
আর তা যদি হয় দক্ষিণের জয়নগরের মোয়া। জয়নগর শহর লাগোয়া বহুড়ু। আর এই এলাকায় বহু দিন আগে থেকে গড়ে উঠেছে মোয়া শিল্প। এখানকার তৈরি মোয়া, গুড় শুধু এ রাজ্য নয় স্বাদ -গুণের জন্য পাড়ি দেয় ভিন রাজ্য সহ বিদেশেও। পৌষের শুরু, তাই ফুরসৎ নেই এলাকার কারিগরদের।
জনশ্রুতি অনুসারে জয়নগরের মোয়া আবিষ্কার হল জয়নগর শহরের নিকটবর্তী এই বহুড়ু গ্রামে। জনৈক যামিনীবাবু একটি অনুষ্ঠানে তিনি নিজের খেতে উৎপাদিত কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া প্রস্তুত করে পরিবেশন করেন। তার স্বাদ পেয়ে জনপ্রিয় হয় জয়নগরের মোয়া। তারপর এই ব্যবসা মহানগর-সহ গোটা রাজ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তখন থেকে ব্যবসায়ীরা তৈরি করতে থাকে এই সুস্বাদু মিষ্টি। ১৯২৯ সালে পূর্ণ চন্দ্র ঘোষ এবং নিত্য গোপাল সরকার স্থাপন করেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা ,ডায়মন্ড হারবার, গঙ্গাসাগর , মথুরাপুর , জয়নগর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে কনকচূড় ধানের চাষ হয়। আর শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।
সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণনগর, নদীয়া, সুন্দরবনের খেজুর গাছ থেকে এই রস মেলে। রস সংগ্রহ করে তা ফুটিয়ে তৈরি হয় গুড়। সেই গুড় খই এর সঙ্গে মিশানো হয়। তার সঙ্গে গাওয়া ঘি কাজু ,কিসমিস দিয়ে তৈরি হয় সবথেকে সুস্বাদু মোয়া। এই এলাকার প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী মহাদেব দাস, গনেশ দাস জানায় ১৪০ বছরের পুরনো তাদের দোকান। মোয়া ,গুড় এর জন্যই বিশেষ ভাবে তাদের পরিচিতি রয়েছে। কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে তো বটেই,দেশ-বিদেশেও তাদের মোয়া সাড়া জাগিয়েছে। করোনার জন্য আগের তুলনায় অনেক খানি মোয়ার চাহিদা কমেছে বটে তবে এবছর আবার ব্যবসা ভাল হবে বলে আশাবাদী তারা। মোয়ার দাম একই আছে, বাড়ানো হয়নি । ভালো মোয়ার দাম ২৩০ -২৪০ টাকা আর তার পর ১২০-১৩০ টাকা প্রতি কেজি।