মালদা: একটা মা কতটা অসহায় হলে নিজের সন্তানকে শিকল বন্দি করে রাখেন, তার নমুনা মিলল পুরাতন মালদা শহরের রাস্তায়। সেই অসহায় মায়ের কাছে সন্তানের হারিয়ে যাওয়ার থেকে শিকল বন্দি করে রাখাই উপযুক্ত মনে হয়েছে। মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে হারিয়ে যাওয়ার শোক তিনি কোনওভাবেই যে নিতে পারবেন না।
বুধবার এরকম ঘটনা পুরাতন মালদা পুরসভা এলাকার তাঁতিপাড়া এলাকায়। হঠাতই সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে, শিকল বাঁধা সাবালক সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন মা। দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনও জন্তুকে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসতেই অনেকে শিউরে উঠছেন। শিকলের জেরে পা ক্ষত হয়ে গিয়েছে। আর সেই ছেলেকে নিয়ে ঘুরছেন মা সেমি রাম।
জানা গিয়েছে তাঁদের বাড়ি পুরাতন মালদা থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বারুইপাড়া এলাকায়।
কেন এরকম অবস্থা ! তা জানতে গিয়ে কথা বলার সময় রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন সেমিদেবী। তিনি বলেন, ছোট থেকেই ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী । রেগে গেলে ইট ছুড়ে। বিগত দিনে বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ছেলে। একজন মায়ের পক্ষে ছেলে হারানোর শোক কতটা তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। দিনমজুরের পরিবারে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। ছেলে যাতে নজরবন্দি থাকে তাই এই ভাবেই শিকলে বন্ধ করে রাখি।
উল্লেখ্য, পুরাতন মালদা থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বারুইপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেমি রাম। তার বড় ছেলে বরুন রাম মানসিক প্রতিবন্ধী। সেমি দেবীর স্বামী শিব শংকর রায়, পেশায় দিনমজুর। ওই দম্পতির চার মেয়ে, এক ছেলে। বাড়ির একমাত্র ছেলেকে দীর্ঘদিন ধরেই শিকলে বন্দী করে রেখেছেন পরিবারের লোকেরা।
এদিন পুরাতন মালদা পুরসভার তাঁতিপাড়া এলাকায় প্রতিবন্ধীদের শনাক্তকরণ শিবিরে এসেছিলেন সেমি দেবী। সঙ্গে ছিলেন তার শিকলবন্দি ছেলে বরুণ রাম। এরকম ঘটনা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের নজরে আসতে হতবাক হয়ে যান অনেকেই। ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী অনেক দেখা যায়। কিন্তু এরকম ভাবে শিকলবন্দি করে রাখা মোটেই উচিত নয়।
ওই মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের মা সেমি দেবী বলেন , ছোটতে অসুস্থ হওয়ার পর ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। এখন ও বড় হয়েছে। হঠাৎ করে রেগে যাওয়া এবং হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে ছেলের পায়ে শিকল দিয়ে তালা মেরে রাখি। আর শিকলে বন্দি রেখেই ছেলেকে নিয়ে এখানে – সেখানে যাই । যদিও এরকমটা কোন মা চাই না। কিন্তু অভাবের সংসার, ছেলের চিকিৎসা করার ক্ষমতা আমাদের নেই । তাই এরকম ভাবে চলতে হচ্ছে।
পুরাতন মালদার বিধায়কের অর্জুন হালদার জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এরকম ভাবে নিজের ছেলেকে শেকলবন্দি করে রেখেছেন পরিবারের লোকেরা তা শুনে খুব দুঃখ হয়েছে। ওই পরিবারটি সঙ্গে দেখা করবো। ওদের কি সমস্যা রয়েছে তা অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখবো।