করোনা নিয়ে যাবতীয় ধোঁয়াশা, প্রশ্নের জবাব দিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব

করোনা নিয়ে যাবতীয় ধোঁয়াশা, প্রশ্নের জবাব দিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব

কলকাতা:  করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে নানাবিধ প্রশ্ন৷ বুধবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

তিনি বলেন, টেস্ট নিয়ে প্রথম থেকেই মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ মানুষ জানতে চাইছে এই টেস্টিং ল্যাবগুলি কি শুধুমাত্র কলকাতার মধ্যেই কেন্দ্রীভূত? নাকি জেলাতেও আছে?  এর উত্তরে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, রাজ্যের ১৫টি ল্যাবরেটরির মধ্যে একটি শিলিগুড়ির নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে, একটি মালদা মেডিকেল কলেজে, একটি মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে এবং একটি মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে আছে৷ 

আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে৷ তা হল, রাজ্যে আরও টেস্টিং ল্যাব খোলা হবে কিনা? আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হ্যাঁ, খোলা হবে৷ ১০টি সরকারি এবং ২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ল্যাবরেটরি খোলার জন্য আইসিএমআর-এর কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে৷ এই ১২টি ল্যাব আইসিএমআর-এর অনুমোদন পেলে, রাজ্যে করোনা টেস্টিং ল্যাবের সংখ্যা বেড়ে হবে ২৭৷  রাজ্যে টেস্টের হার কত? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ থেকে ১ মাস আগে দিনে টেস্টের গড় ছিল ২৫০৷ আজকে সেই সংখ্যা প্রায় ২৫০০ ছুঁয়েছে৷ ৩০ হাজার ১৪১টি নমুনা এখনও পর্যন্ত টেস্ট হয়েছে রাজ্যে৷  

ইচ্ছা করলেই কেন টেস্ট করানো যাচ্ছে না? এমন প্রশ্নও করছে মানুষ৷ স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রেও বিধিবদ্ধ প্রোটোকল আছে৷ কাদের করোনা টেস্ট হবে আর কাদের হবে না, তাই নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে আইসিএমআর-এর। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া টেস্ট করানো যাবে না৷ আইসিএমআর- অনুমোদিত ল্যাব ছাড়া কোনও ভুয়ো ল্যাবরেটরিতে দয়া করে যাবেন না৷ তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ টেস্ট করতে চাইছেন বলে কিছু ভুয়ো টেস্ট ক্লিনিক গজিয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই একটি ভুয়ো ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ৷ 

কোথায় কোভিড রোগী চিকিৎসা পাবেন?  স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, এর আগেও এই বিষয়ে জানানো হয়েছে৷ আরও একবার বলা হচ্ছে, করোনা চিকিৎসার জন্য কোভিড হাসপাতালে যাওয়াই ভালো৷ রাজ্যে কতগুলি কোভিড হাসপাতাল আছে? তিনি জানান, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আমাদের রাজ্যে ৬৭টি কোভিড হাসপাতাল আছে৷  এই হাসপাতালগুলিতে কতগুলি বেড আছে? হাসপাতালগুলিতে মোট ৮,৩৬টি বেড আছে বলে জানা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

মানুষ জানাতে চাইছে, এই হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটর আছে কিনা?  আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই হাসপাতালগুলিতে ২৭১টি ভেন্টিলেটর আছে৷ তবে আজ পর্যন্ত মাত্র ৩০টি ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন পদ্ধতি কাজে লেগেছে। আইসিইউ বেড আছে ৮৬০টি৷  পিপিই মাস্ক নিয়ে কতটা প্রস্তুত রাজ্য?  স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, প্রায় ৬ লক্ষ পিপিই, ৩ লক্ষের বেশি এন-৯৫ মাস্ক, সাড়ে ২১ লক্ষ নর্মাল মাস্ক, প্রায় ১১ লক্ষ গ্লাভস এখনও পর্যন্ত হাসপাতালগুলিতে দেওয়া হয়েছে৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও এই সকল মেডিকেল সামগ্রী দেওয়া হয়েছে৷ কোভিড রোগী মারা গেল তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট কে ইস্যু করবেন? প্রোটোকল অনুযায়ী চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেট লিখবেন৷ 

এই প্যান্ডেমিক প্রতিরোধে মেডিকেল ব্যবস্থার বাইরে অর্থনৈতিক সামাজিকভাবে আর কী কী দীর্ঘ মেয়াদি বা স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য? স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি তৈরির জন্য রাজ্যে অনেকটাই কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে৷ ইকনমিক রিভাইভাল প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে৷  এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পরা পরিযায়ী শ্রমিক, পর্যটক, ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে রাজ্য৷ এটি একটি বিপুল কর্মকাণ্ড৷ প্রতিবেশি রাজ্যগুলির সীমান্তে কাউকে আটকে রেখে কষ্ট দেওয়া হবে না৷ 

এদিনের বৈঠকে তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিমানের পরিষেবা বন্ধের কথা অনেকদিন আগেই বলেছিল রাজ্য। কিন্তু সেটা কার্যকর হয়েছে অনেক পরে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা আগে থাকতেই বন্ধ করা উচিত ছিল৷ তিনি জানান, রাজ্যের তরফে গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ক্ষুধা এবং রোগের মোকাবিলা করতে রাজ্যের গরিব মানুষদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে৷ তাছাড়াও এই সময় আর্থিক সমস্যা মেটাতে বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার মাধ্যমে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ যার থেকে উপকৃত হয়েছেন ৬০ লক্ষ মানুষ৷

এই মুহূর্তে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাসে হাজার টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে আড়াই লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন। সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা যোদ্ধাদের জন্য দশ লক্ষ টাকার বিমা চালু করা হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিকরাও৷ রাজ্যের ছ’কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের আশা কর্মীরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভে করছেন তাঁরা৷ 
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কিন্তু এর পরেও টেস্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ গতকাল আড়াই হাজার টেস্ট হয়েছে রাজ্যে৷ 

একটি ল্যাবেরটরি দিয়ে যে লড়াই শুরু হয়েছিল, সেই ল্যাবরেটরির সংখ্যা এখন ১৫। ১০টি সরকারি ও ৫ টি বেসরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ল্যাবরেটরি আছে পশ্চিমবঙ্গে৷  স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। ১,৩৪৪ জন আক্রান্ত ছিলেন গতকাল৷ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১,৪৫৬। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪ জন। রাজ্যে করোনায় মোট মৃত ৭২। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন এক জন। আজ পর্যন্ত মোট ২৬৫ জন রোগী সেরে উঠেছেন৷ এই মুহূর্তে ১,০৪৭ জন করোনা অ্যাকটিভ রোগী রয়েছেন বলে জানালেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 10 =