বারাসত: আস্ত পাকাবাড়ি মাটি থেকে উপরের উঠল প্রায় তিন ফুট৷ মাটির নিচ থেকে ভিত-সহ গোটা বাড়িকে উপরে তুলতে বিপুল টাকা খরচ করে নিজের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে নামলেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধান৷ বিপুল টাকা খরচ করে প্রধানের বাড়িতে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ঘিরে তীব্র কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে দত্তপুকুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়৷ কিন্তু, আচমকা মাটি নিচ থেকে গোটা বাড়ি উপরে তুলতে গেলেন কেন প্রধান? তার পিছনেও রয়েছে বিরাট কারণ!
কয়েকদিন ধরেই স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র কৌতূহল৷ স্বয়ং স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি তোলার কাজ দেখতে সাত সকালে উপচে পড়া ভিড় কৌতূহলীদের৷ মাটি থেকে বাড়ি উপরে ফেলেছেন প্রধান৷ খবর চাউর হতেই দূর দূরান্তের মানুষজনও আসতে শুরু করেছেন৷ নিজে চোখে সেই কর্মযজ্ঞ দেখছেন ব্যায়াম সমিতিপাড়ার বাসিন্দারা৷ কেউ কেউ খোঁজ নিচ্ছেন, তাঁদের বাড়ি সরানো যাবে কি না! কীভাবে তা সম্ভব? বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক-বিরোধী দলের স্থানীয় নেতাদের মুখে প্রধানের বাড়ি ঘিরে চলছে চর্চা৷
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত প্রধান দেবাযানী সর্দার রায়ের বাড়ি ব্যায়াম সমিতিপাড়া এলাকায়৷ ২০১২ সালে একতলা বাড়ি কেনেন তিনি৷ বাড়িটি ২৫ বছরের পুরোনো৷ একেতো ২৫ বছরের পুরোনো বাড়ি, অন্যদিকে নিচু এলাকা৷ সামান্য বৃষ্টিতেই একতলার ঘরে জল জমে৷ নর্দমার জলও ঢুকে যায় প্রধানের বাড়িতে৷ সাধারণ জনতার মতো তিনিও জলযন্ত্রণার শিকার৷ আর এই জনযন্ত্রণার থেকে মুক্তি পেতে প্রধানের স্বামী দিবাকর রায় স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ার ডাকেন৷ শুরু হয় বাড়ি উপরে তোলার পরিকল্পনা৷ এরপর একটি সংস্থাকে বাড়ি তোলার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত বাড়ি তুলতে প্রতি বর্গফুটে ২০০ টাকা খরচ৷ তার থেকে বেশি হলে পরিস্থিতি বুঝে দাম ধার্য করা হয়৷
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রধানের বাড়িতে শুরু হয়েছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ! মাটি থেকে ধীরে ধীরে গোটা বাড়িটা প্রায় তিন ফুট উঁচুতে তোলা হয়৷ কিন্তু, প্রধান বলে কথা! জলযন্ত্রণার থেকে মুক্তি পেতে প্রধানের হাতে বিকল্প থাকলেও সাধারণ জনতার কি আছে? খোদ প্রধানের বাড়িতে কর্মযজ্ঞ দেখতে সাধারণ বাসিন্দারা ভিড় জমালেও আক্ষেপ রয়েছে তাঁদের৷ তাঁদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষার সময় জলযন্ত্রণায় নাজেহাল হতে হয়৷ ভোটের সময় নেতার এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান৷ বেহাল নিকাশির কারণে থেকেই যায় জনযন্ত্রণা৷ আর পাঁচজনের মতো নিকাশি সমস্যায় জলযন্ত্রণায় নাজেহাল হতে হয় প্রধান পরিবারকেও৷ কিন্তু, প্রধানদের কাছে বিকল্প সুযোগ সুবিধা থাকলেও জনতার কি সেই ব্যবস্থা আছে? করোনা-দীর্ঘ লকডাউনের পর যখন সংসার ঠেলতে গিয়েই চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে সাধারণ জনতা, তখন বাড়ি মজবুত করা ‘স্বপ্নে’র!
স্থানীয়দের প্রশ্ন, জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে প্রধান তো নিজের বাড়ি ৩ ফুট উঁচু করে নিয়েছে, কিন্তু এলাকার বেহাল নিকাশি কবে ঠিক হবে? কবে জলযন্ত্রণা থেকে সাধারণ জনতা পাবেন মুক্তি? এবার কি উদ্যোগ নেবে পঞ্চায়েত? নাকি, প্রধানের দেখানো পথে, নিজের ব্যবস্থা নিজেদের করে নিতে হবে?