রাজভবনে ‘পিস রুম’ খুললেন রাজ্যপাল! ‘সমান্তরাল প্রশাসন’ ভরসা জোগাচ্ছে বিরোধীদের?

রাজভবনে ‘পিস রুম’ খুললেন রাজ্যপাল! ‘সমান্তরাল প্রশাসন’ ভরসা জোগাচ্ছে বিরোধীদের?

কলকাতা:  পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পর্বে যে বেলাগাম সন্ত্রাস ঘটেছে বিভিন্ন জেলায়, তারপরেই নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হিংসায় ঝরে গিয়েছে একের পর এক তাজা প্রাণ। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল রাজ্যপাল হিংসা কবলিত অঞ্চল পরিদর্শন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি দু-তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি। কিন্তু সেটাই যদি হবে তাহলে এতজন মানুষের মৃত্যু কি করে হল? সেই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে তৃণমূল? আর এই আবহের মধ্যে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করল রাজভবন।

 

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজভবনে খোলা হল ‘পিস রুম’। যেখানে ফোন অথবা ই-মেল করে অভিযোগ জানানো যাবে। রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই ঘোষণা করেছে রাজভবন। যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটি হল ০৩৩-২২০০১৬৪১ এর পাশাপাশি ই-মেল আইডি’ও দেওয়া হয়েছে। সেটি হল SD2w.b.governor@gmail.com

মূলত নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে পারবেন ওই নম্বরে ফোন করে অথবা ই-মেলের মাধ্যমে। আর তার প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সমস্যাগুলি পাঠিয়ে দেবে রাজভবন।

নাগরিকদের সাহায্যে করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন সিভি আনন্দ বোস। যে বিষয়টিকে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে রাজভবনকে অতীতে এমন পদক্ষেপ করতে কোনও দিন দেখা যায়নি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে রাজ্যপাল নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তবে কী সাধারণ মানুষের স্বার্থে এভাবে রাজ্যপাল ‘সমান্তরাল প্রশাসন’ চালাতে চাইছেন? এই চর্চা শুরু হয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে। তবে এতে কিন্তু শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ আপত্তির কিছু দেখছেন না।

 রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসন নিশ্চয়ই হিংসা চায় না। তাহলে রাজ্যপাল যদি অশান্তি বন্ধে এমন পদক্ষেপ করেই থাকেন তাতে অসুবিধার কি আছে? এই পদক্ষেপকে তো সুশাসক হিসেবে তৃণমূলের স্বাগত জানানোর কথা। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই হচ্ছে। রাজ্যপালের এই পদক্ষেপকে তীব্র আক্রমণ করছে তৃণমূল। তাই প্রশ্ন, এই পদক্ষেপে তৃণমূলের আপত্তি কেন? তারা কি হিংসা বন্ধ করতে চায় না? শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তারা কি অসুবিধায় পড়বে? বাংলার আনাচে-কানাচে এই চর্চাই চলছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য জুড়ে হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে প্রথম খুন হন এক কংগ্রেস কর্মী। এরপর সেই তালিকায় যোগ হতে থাকে একের পর এক নাম। তবে মনোনয়ন ঘিরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়ে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। ভাঙড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। অশান্ত হয়ে ওঠে এই জেলারই ক্যানিং। গোটা ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ভাঙড় ও ক্যানিংয়ে যান। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও বিরোধী দলের কর্মীদের সঙ্গে। হিংসা বরদাস্ত করা হবে না, দুটি জায়গা থেকেই এমন কড়া বার্তা দেন তিনি। এরপরই পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাতে শান্তির আবহ বজায় থাকে সেই লক্ষ্যে রাজভবনে ‘পিস রুম’ খোলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাই এটা স্পষ্ট রাজ্যপালের এই নতুন  পদক্ষেপ ঘিরে ফের রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের চরম সংঘাত তৈরি হল। বিষয়টি আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 13 =