কলকাতা: করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে চুড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন রোগীর পরিজনেরা৷ বেড খালি থাকলেও হাসপতাল থেকে বেড খালি নেই বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ৷ হন্যে হয়ে রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে তাঁদের৷ এই সমস্যা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হাসপাতালে বেড সংক্রান্ত তথ্য এবার অনলাইনে সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দেওয়া উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷
মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বৃহস্পতিবার নবান্নে করোনা চিকিৎসা নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শহরের সব হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি হাসপাতালে শূন্য বেডের সংখ্যা স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হবে৷ বেসরকারি হাসপাতালে কত শয্যা শূন্য রয়েছে সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য আজ থেকে রাজ্যের মানুষ ওয়েবসাইট থেকে পারবেন৷ এছাড়াও শয্যা সংক্রান্ত তথ্য প্রতিটি হাসপাতালের বাইরে বিজ্ঞাপিত করার পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইনের কথা উল্লেখ করে বেসরকারি হাসপাতালকে কোনও অবস্থাতেই রোগী প্রত্যাখ্যান করতে নিষেধ করা হয়েছে৷ তবে শুধু সরকারের মুখের কথায় কতটা কাজের কাজ হবে তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলের একাংশ সন্দিহান! কারণ মুখ্যসচিব নিজে জানিয়েছেন, আইন প্রয়োগ করে কাউকে কোন কিছুর জন্য বাধ্য করা রাজ্য সরকাররে নীতি নয়৷ তবে পরিস্থিতির ওপর সরকার নজর রাখবে৷ কাজেই রোগী হয়রানীর বিষয়টি এখনও শুধুমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল কতৃপক্ষের মৌখিক প্রতিশ্রুতি আর সদিচ্ছার ওপরে ছেড় দেওয়া হল বলে পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত৷
মুখ্যসচিব বলেন, শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এক হাজারের বেশি শয্যা রয়েছে৷ এরমধ্যে ৫০ শতাংশ এখনও শূন্য বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে৷ সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে ১০ হাজারের বেশি কোভিড শয্যা রয়েছে৷ এর মধ্যে ৮ হাজার শয্যা এখনও শূন্য৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলির বৈঠকে শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ পাশাপাশি মৃদু উপসর্গ বিশিষ্ট করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০৪টি সেফ হোম সেন্টার তৈরি করা হয়েছে৷ একই রকম ভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি স্যাটেলাইট হেলপ ফেসিলিটি তৈরি করছে৷ এর ফলে কোভিড হাসপাতালগুলির ওপর আগামী দিনে চাপ আরও কমবে৷ রোগী প্রত্যাখ্যান বন্ধ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার খরচ কমানোর ওপর এদিনের বৈঠকে জোর দেওয়া হয়েছে৷ এদিন রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়েছে পিপিই-সহ সুরক্ষার সব খরচ হাসপাতাল রোগীদের থেকে নিতে পারবে না৷ এই খরচ দু'পক্ষ ভাগ করে দেবে৷ এই নিয়ে হাসপাতালগুলিকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই জানান মুখ্যসচিব৷ এছাড়াও, করোনা পরীক্ষা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই শহরেই কেউ কোভিড পরীক্ষার জন্য ২৮০০ টাকা নিচ্ছে৷ কেউ ৪৫০০ টাকা নিচ্ছে৷ কিন্তু সেই রেট ফিক্সড করা হোক৷ সরকার যদিও কিছু বলছে না এখনই৷ কিন্তু দু'রকমের দাম হতে পারে না৷ এই দাম আলোচনা করে একটাই করা হোক৷’’
এছাড়াও, কোভিড রোগীদের না ফিরিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে চিকিৎসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে৷ এর পাশাপাশি, প্রাণদায়ী অপারেশনের জন্য কোভিড-১৯ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না বলেই জানিয়েছেন মুখ্যসচিব৷ তিনি বলেন, 'সবরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই এই অপারেশন করতে হবে৷ তাতে রোগীর প্রাণ আগে বাাঁচাতে হবে৷ তারপর কোভিড রিপোর্ট এলেও কিছু করার নেই৷’’