আজ কলকাতার জন্মদিন! জানেন, ভারতের প্রথম গাড়ির রেস হয়েছিল এই মহানগরীতে?

বোম্বাই শহরে প্রথম গাড়ি এলেও তার ব্যবহার বাড়তে থাকে আনন্দের শহর কলকাতায়। কলকাতাকে তখন দেশের সবচেয়ে আভিজাত্য শহর হিসাবে উল্লেখ করা হত। কলকাতার বাবু, জমিদার কিংবা সদ্য বড়লোক হয়ে ওঠা শ্রেণি এখানে বসবাস করতেন। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদাও উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে কলকাতায়। গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কলকাতাতে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রথম অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন। পরে এই সংস্থার নিয়ম কার্যকর করা হয় দেশের অন্যান্য শহর গুলিতে। কলকাতায় অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল প্রথম মোটরগাড়ি র‍্যালি অনুষ্ঠিত করে ১৯০৪ সালে।

সিদ্ধার্থ বোস: ১৬৯০ সালে জোব চার্নক কর্তৃক কলকাতা নগরীর প্রতিষ্ঠা হয়। যদিও এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ি এবং সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের মধ্যে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব আজও চলছে। ইতিহাসের তিনটি গ্রাম- কলিকাতা, সুতানুটি এবং গোবিন্দপুর নিয়ে আজকের কলকাতা গড়ে উঠেছিল। সেই কলকাতাই কালক্রমে সিটি অব জয় হিসেবে পরিচিত দুনিয়ার কাছে। ব্রিটিশদের রাজধানী হওয়ায় এদেশের প্রথম অনেক কিছুই এই শহরেই ঘটেছিল। এমনকী চার চাকা গাড়ির প্রথম ব়্যালিও এই শহরেই।

১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট জোব চার্নক কলকাতার পত্তন করেন। সেই সূত্রে, আজ কলকাতার ৩৩০তম জন্মদিবস। যাইহোক, চলে আসা যাক সেই গর্বের চমকপ্রদ গাড়ি র্যা লির ইতিহাসের কথায়। কলকাতা তখন কলিকাতা বা ব্রিটিশ ক্যালকাটা নামে পরিচিত। ১৮৯৭ সালে ভারতবর্ষে জামশেদজি টাটার হাত ধরে প্রথম মোটর গাড়ি এসে পৌঁছয়। এরপর আরও তিনটি গাড়ি ভারতে আসে। কিন্তু সেগুলি প্রথম কলকাতায় আসেনি, এসেছিল তৎকালীন বোম্বাই শহরে, মূলত পার্সিদের জন্য।

কলকাতার গাড়ি র‍্যালির বিজ্ঞাপন

বোম্বাই শহরে প্রথম গাড়ি এলেও তার ব্যবহার বাড়তে থাকে আনন্দের শহর কলকাতায়। কলকাতাকে তখন দেশের সবচেয়ে অভিজাত শহর হিসাবে উল্লেখ করা হত। বাবু, জমিদার কিংবা সদ্য বড়লোক হয়ে ওঠা শ্রেণি এখানে বসবাস করতেন। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদাও উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে এখানে। গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কলকাতাতে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রথম অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন। পরে এই সংস্থার নিয়ম কার্যকর করা হয় দেশের অন্যান্য শহরগুলিতে। কলকাতায় অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল প্রথম মোটরগাড়ি ব়্যালি আয়োজন করে ১৯০৪ সালে।

কলকাতা থেকে আর্মি ক্যান্টনমেন্ট জোন ব্যারাকপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রাস্তায় এই র্যা লি করা হয়েছিল। মাঝপথে মহারাজ জিতেন্দ্রমোহন ঠাকুরের প্রাসাদকে সাময়িক বিরতির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে এই র্যা লির জন্য ৬০টি গাড়ি নথিভুক্ত হলেও মাত্র ১১টি গাড়ি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এই গাড়ির রেস আজকের রেসের মতো ছিল না মোটেই। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল একসঙ্গে রাজপথ দিয়ে গাড়ি চালানো। সেই সময়ের হিসাবে এই রেসও ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সেই সময়ের ইঞ্জিন চালু করতে হলে একটি হাতল ঘোরাতে হত।

তারপরও যে কতক্ষণ সেই গাড়ি চলবে তার কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। তখনকার কলকাতার রাস্তাও এখনকার পিচ ঢালা রাস্তার মতো মোলায়েম ছিল না। খানাখন্দ ও নুড়ি পাথরের ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে যেত। সেই সময়ে সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিন বলতে ছিল ৮.৫ বিএইচপি, যা বর্তমানের ইঞ্জিনের তুলনায় কিছুই না। ফলে এই রেস কখনওই প্রতিযোগিতা মূলক ছিল না বরং কলকাতায় আরও গাড়িপ্রেমিক গড়ে তোলাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। কলকাতার পর এই ধরনের রেস জনপ্রিয় হয় ভারতের বাকি শহরেও। তারপর সময়ের সঙ্গে অত্যাধুনিক গাড়ির বাজার গড়ে ওঠে ভারত ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে। বিদেশি গাড়ির আমদানিও শুরু হতে থাকে। রেসের চরিত্র পাল্টে যায়। কিন্তু ভারতের গাড়ির রেসের ইতিহাসে কলকাতার নাম থেকে গেছে প্রথমেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =